মিথ্যাবাদী কবিতা । সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম

মিথ্যাবাদী কবিতাটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের অন্যতম মানবতাবাদী কাব্যগ্রন্থ সাম্যবাদী থেকে নেওয়া হয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থটি ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরে, অর্থাৎ বঙ্গাব্দ ১৩৩২ সালের পৌষ মাসে প্রকাশিত হয়। নজরুল তাঁর সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থে মানবতা, সাম্য, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার এবং ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর প্রকাশ করেছেন। এ গ্রন্থে মোট ১০টি কবিতা রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য— ‘সাম্যবাদী’, ‘মানুষ’, ‘নারী’, ‘পাপ’, ‘কুলি-মজুর’ প্রভৃতি। ‘মিথ্যাবাদী’ কবিতায় কবি সমাজের ভণ্ডামি, মিথ্যাচার ও দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এই কাব্যগ্রন্থ নজরুলের সমাজচেতনা, মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও শোষিতের প্রতি গভীর সহানুভূতির প্রকাশ হিসেবে বাংলা সাহিত্যজগতে এক অনন্য সংযোজন।

 

মিথ্যাবাদী কবিতা

 

মিথ্যা বলেছ বলিয়া তোমায় কে দিল মনস্তাপ?
সত্যের তরে মিথ্যা যে বলে স্পর্শে না তারে পাপ।
গোটা সত্যটা শুধু তো সত্যকথা বলাতেই নাই,
মিথ্যা কয়েও সত্যনিষ্ঠ হতে পারি আমরাই!
সত্যবাক সে বড়ো কিছু নয়, কজন সত্যবান?
সত্যবাদীরা কজন দিয়াছে সত্যের তরে প্রাণ?

অন্তরে যারা যত বেশি ভীরু যত বেশি দুর্বল,
নীতিবিদ তারা তত বেশি করে সত্য-কথন ছল।
সত্যকামেরও নমস্য যারা সত্যনিষ্ঠ বীর –
সত্যের তরে হাসিতে হাসিতে যারা দিল নিজ শির!
হয়তো তাহারা অনেক মিথ্যা বলেছে জীবন ভরে,
তবু তারা বীর – তারা দিল প্রাণ সত্য-রক্ষা তরে।

 

সত্য লইয়া করিছে ওজন কে উনি মুদির মতো?
মনে মনে ভাবে কী কাজই করিনু আমি সে বিজ্ঞ কত!
বলি ওহে বাপু সত্য-ব্যাপারী, সত্য কি চাল ডাল?
কোথা কয় রতি সত্য কমিল, তাই নিয়ে দেবে গাল!

সত্য মুদির তথ্য –
অমুক বীরের জীবনে কমেছে হুঁহুঁ এতটুকু সত্য!
ও কে আসে বাবা? সত্যেরে তবু এরা মাপে, ও যে গণে।
দশটি কথায় বাঁধিল সত্য, হেসে মরি মনে মনে!
বাটখারা আর রশি নিয়ে এল সত্যের পিসি-মাসি,
মাপিয়া মাপিয়া ভরিল বস্তা, গুণে গুণে বাঁধে খাসি।

বন্ধু, শুনো না কূট-তর্কের যত হাতি ঘোড়া উট,
সত্যনিষ্ঠা থাকে যদি প্রাণে, বেপরোয়া বলো ঝুট!

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য কবিতাঃ

Leave a Comment