ঈশ্বর কবিতাটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। সাম্যবাদী বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ । বইটি ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরে বাংলার পৌষ,১৩৩২ সালে প্রকাশিত হয়। কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোয় বেশিরভাগই মানবিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। কাজী নজরুলের একটি অসাধারণ ও মানবতাবাদী কাব্যগ্রন্থ হলাে সাম্যবাদী’। এ কাব্যগ্রন্থে মােট ১০টি কবিতা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য কবিতা হলাে- সাম্যবাদী, মানুষ, নারী, পাপ, কুলি-মজুর।
ঈশ্বর কবিতা
কে তুমি খুঁজিছ জগদীশ ভাই আকাশ পাতাল জুড়ে’
কে তুমি ফিরিছ বনে-জঙ্গলে, কে তুমি পাহাড়-চূড়ে?
হায় ঋষি দরবেশ,
বুকের মানিকে বুকে ধ’রে তুমি খোঁজ তারে দেশ-দেশ।
সৃষ্টি রয়েছে তোমা পানে চেয়ে তুমি আছ চোখ বুঁজে,
স্রষ্টারে খোঁজো-আপনারে তুমি আপনি ফিরিছ খুঁজে!
ইচ্ছা-অন্ধ! আঁখি খোলো, দেশ দর্পণে নিজ-কায়া,
দেখিবে, তোমারি সব অবয়বে প’ড়েছে তাঁহার ছায়া।
শিহরি’ উঠো না, শাস্ত্রবিদের ক’রো না ক’ বীর, ভয়-
তাহারা খোদার খোদ্ ‘ প্রাইভেট সেক্রেটারী’ ত নয়!
সকলের মাঝে প্রকাশ তাঁহার, সকলের মাঝে তিনি!
আমারে দেখিয়া আমার অদেখা জন্মদাতারে চিনি!
রত্ন লইয়া বেচা-কেনা করে বণিক সিন্ধু-কুলে-
রত্নাকরের খবর তা ব’লে পুছো না ওদের ভুলে’।
উহারা রত্ন-বেনে,
রত্ন চিনিয়া মনে করে ওরা রত্নাকরেও চেনে!
ডুবে নাই তা’রা অতল গভীর রত্ন-সিন্ধুতলে,
শাস্ত্র না ঘেঁটে ডুব দাও, সখা, সত্য-সিন্ধু-জলে।
কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সঙ্গীতকার। তার মাত্র ২৩ বৎসরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের জন্ম দেন। এই দুটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ও ভাঙ্গার গান সঙ্গীত। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একই সময় রচিত আরেকটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে কামাল পাশা- এতে ভারতীয় মুসলিমদের খিলাফত আন্দোলনের অসারতা সম্বন্ধে নজরুলে দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন আন্তর্জাতিক ইতিহাস-চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।
১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কবিতা-সংকলন অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতায় একটি নতুনত্ব সৃষ্টিতে সমর্থ হয়, এর মাধ্যমেই বাংলা কাব্যের জগতে পালাবদল ঘটে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরপর এর কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: “প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, শাত-ইল্-আরব, বিদ্রোহী, কামাল পাশা” ইত্যাদি। এগুলো বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তার শিশুতোষ কবিতা বাংলা কবিতায় এনেছে নান্দনিকতা খুকী ও কাঠবিড়ালি, লিচু-চোর, খাঁদু-দাদু ইত্যাদি তারই প্রমাণ।
এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি কবি চিন্তার অনবদ্য প্রকাশ। এই গ্রন্থে তিনি গণমানুষের অধিকার, বঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার গ্রাস, বর্নবাদের কথা বলেছেন। যেখানে কোনো জাত নয় মানুষকে কেবল মানুষ নামেই চিহ্নিত করা তার উদ্দেশ্য। যারা নিজেদের কথা স্বাধীনভাবে বলতে পারবে। স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারবে এমন প্রত্যাশা করেছেন কবি। নজরুল নির্জীব জাতির প্রাণে তার কবিতার মাধ্যমে আশা-উদ্দীপনা জাগিয়ে তােলেন। তিনি পথহারা জাতিকে পথ দেখিয়েছেন, গেয়েছেন মানবতার গান, উচ্চারণ করেছেন সাম্যের মন্ত্র। এ কাব্যের প্রতিটি কবিতায় তিনি মানুষের মানবিক সত্তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছেন।
- সাম্যবাদী
- ঈশ্বর
- মানুষ
- পাপ
- চোর-ডাকাত
- বারাঙ্গনা
- মিথ্যাবাদী
- নারী
- রাজা-প্রজা
- সাম্য
- কুলিমজুর