[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

প্রত্যাবর্তন কবিতা | মরুভাস্কর কাব্যগ্রন্থ ।কাজী নজরুল ইসলাম

প্রত্যাবর্তন কবিতা টি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর মরুভাস্কর কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে । মরুভাস্কর কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ । এই গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে। হজরত মোহাম্মদ সঃ এর জীবনী নিয়ে চারটি সর্গে ১৮ টি খণ্ড-কবিতা নিয়ে এই কাব্যগ্রন্থ।

 

প্রত্যাবর্তন কবিতা | মরুভাস্কর কাব্যগ্রন্থ ।কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi nazrul islam ]

প্রত্যাবর্তন কবিতা

সেবার দূষিত ছিল বড়ো বায়ু মক্কাপুরীর,
নিশ্বাসে ছিল বিষের আমেজ হাওয়ায় সুরীর।
কহিলেন দাদা মুত্তালিব, ‘গো হালিমা শুনো,
মরু-প্রান্তরে লয়ে যাও মোর চাঁদেরে পুন!
আবার যেদিন ডাকিব, আনিবে ফিরায়ে এরে,
মাঝে মাঝে এনে দেখাইয়া যেয়ো মোর চাঁদেরে!’
আমিনার চোখে ফুরাল শুক্ল চাঁদের তিথি,
আবার আসিল ভবনে অতীত-আঁধার ভীতি।

স্বপনে চলিয়া গেল যেন চাঁদ স্বপনে এসে,
দ্বিতীয়ার চাঁদ লুকাল আকাশে ক্ষণেক ভেসে।
অঙ্গ ভরিয়া অশ্রু-চুমায় চলিল ফিরে
সোনার শিশু গো – নীড় ত্যজি পুন অজানা তীরে।
হালিমার বুকে খুশি ধরে নাকো, নীলাঞ্চলে
হারানো মানিক পুন পেল তার ভাগ্যবলে!
চলে অলক্ষ্যে সাথে বেহেশ্‌ত-ফেরেশতারা!
মক্কার মণি পুন মরুপথে হইল হারা।
হালিমার দুই কন্যা ‘আনিসা’ ‘হাফিজা’ ছুটি
চুমিল খুশিতে মোহাম্ম্দের নয়ন দুটি!
‘আবদুল্লাহ্’ হালিমা-দুলাল মানের ভরে
রহিল দাঁড়ায়ে অদূরে, নয়নে সলিল ঝরে।

 

প্রত্যাবর্তন কবিতা | মরুভাস্কর কাব্যগ্রন্থ ।কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi nazrul islam ]

সে যখন ছিল ঘুমায়ে, তাহার জননী কখন
নিয়ে গেল কোথা মোহাম্মদেরে ; ভাঙিতে স্বপন
খুঁজিল কত না সাথিরে তাহার কানন গিরি!
রোদন করুণ প্রতিধ্বনিতে এসেছে ফিরি!
শয়নে স্বপনে ওই মুখ তার স্মৃতির মাঝে
উঠিয়াছে ভাসি, হেরেছে তাহারে সকল কাজে।
নড়িয়া উঠেছে খেজুরের পাতা বাতাসে যবে
সে ভেবেছে তারে ডাকিতেছে সাথী নূপুর-রবে।
শিস দিত যবে বুলবুলি বসি আনার-শাখে,
মনে হত তার, বন্ধু বংশী বাজায়ে ডাকে।

দুম্বা মেষের শিশুরা করুণ নয়ন তুলি
চাহিয়া থাকিত, খুঁজিত কাহারে সকল ভুলি।
মেষ-চারণের মাঠে তরুতলে বসিয়া একা
পাঠায়েছে তার হারানো সখারে সলিল-লেখা।
ফিরিয়া আসিল লুকোচুরি খেলে যদি সে চপল,
ওর সাথে আড়ি – বল মায়ে ওরে নিয়ে যেতে বল।

হালিমার স্বামী হারিস শিশুরে লইল কাড়ি,
আনন্দ তার পুনরায় যেন ফিরিল বাড়ি।
মোহাম্মদ সে আবদুল্লার কন্ঠ ধরি
বলে, ‘আমি কত কেঁদেছি দোস্ত তোমারে স্মরি।’
ছুটিল আবার দুটিতে পাহাড়ি চারণ-মাঠে,
বংশী বাজায়ে দুম্বা চরায়ে সময় কাটে!
রাখালের রাজা আসিল ফিরিয়া রাখাল-দলে,
আবার লহর-লীলায় পাহাড়ি নহর চলে।

 

প্রত্যাবর্তন কবিতা | মরুভাস্কর কাব্যগ্রন্থ ।কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi nazrul islam ]

কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সঙ্গীতকার। তার মাত্র ২৩ বৎসরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। তার জীবন শুরু হয়েছিল অ কিঞ্চিত কর পরিবেশে। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।

মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্ম নিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে। একই সঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজন্যদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দী করেছিল। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন অবিভক্ত ভারতের বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের জন্ম দেন। এই দুটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ও ভাঙ্গার গান সঙ্গীত। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশি জন প্রিয়তা অর্জন করেন। একই সময় রচিত আরেকটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে কামাল পাশা- এতে ভারতীয় মুসলিমদের খিলাফত আন্দোলনের অসারতা সম্বন্ধে নজরুলে দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন আন্ত র্জাতিক ইতিহাস-চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।

১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কবিতা-সংকলন অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতায় একটি নতুনত্ব সৃষ্টিতে সমর্থ হয়, এর মাধ্যমেই বাংলা কাব্যের জগতে পালাবদল ঘটে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরপর এর কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: “প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, শাত-ইল্‌-আরব, বিদ্রোহী, কামাল পাশা” ইত্যাদি।

এগুলো বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তার শিশুতোষ কবিতা বাংলা কবিতায় এনেছে নান্দনিকতা খুকী ও কাঠবিড়ালি, লিচু-চোর, খাঁদু-দাদু ইত্যাদি তারই প্রমাণ।

 

কবিতা প্রত্যাবর্তন দ্বিতীয় সর্গ কাব্যগ্রন্থ মরুভাস্কর কাজী নজরুল ইসলাম প্রত্যাবর্তন কবিতা | মরুভাস্কর কাব্যগ্রন্থ ।কাজী নজরুল ইসলাম

 

মরুভাস্কর কাব্যগ্রন্থ এর অন্যান্য কবিতাঃ

প্রথম সর্গ

  • অবতরণিকা
  • অনাগত
  • অভ্যূদয়
  • স্বপ্ন
  • আলো-আঁধারি
  • দাদা
  • পরভৃত

দ্বিতীয় সর্গ

  • শৈশব-লীলা
  • প্রত্যাবর্তন
  • “সাক্কুস সাদ্‌র” (হৃদয় উন্মোচন)
  • সর্বহারা

তৃতীয় সর্গ

  • কৈশোর
  • সত্যাগ্রহী মোহাম্মদ

চতুর্থ সর্গ

  • শাদী মোবারক
  • খদিজা
  • সম্প্রদান
  • নও কাবা
  • সাম্যবাদী

Leave a Comment