রক্তাম্বরধারিণী মা কবিতাটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। অগ্নিবীণা বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এটি ১৩২৯ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে (অক্টোবর, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ) প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা আছে। কবিতাগুলি হচ্ছে – ‘প্রলয়োল্লাস (কবিতা)’, ‘বিদ্রোহী’, ‘রক্তাম্বর-ধারিণী মা’, ‘আগমণী’, ‘ধূমকেতু’, কামাল পাশা’, ‘আনোয়ার ‘রণভেরী’, ‘শাত-ইল-আরব’, খেয়াপারের তরণী’, কোরবানী’ ও মোহররম’। এছাড়া গ্রন্থটির সর্বাগ্রে বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ-কে উৎসর্গ করে লেখা একটি উৎসর্গ কবিতাও আছে।

রক্তাম্বরধারিণী মা
রক্তাম্বর পরো মা এবার
জ্বলে পুড়ে যাক শ্বেত বসন
দেখি ওই করে সাজে মা কেমন
বাজে তরবারি ঝনন ঝন।
সিঁথির সিঁদুর মুছে ফেলো মা গো,
জ্বালো সেথা জ্বালো কাল-চিতা
তোমার খড়্গ-রক্ত হউক
স্রষ্টার বুকে লাল ফিতা।
এলোকেশে তব দুলুক ঝঞ্ঝা
কালবৈশাখী ভীম তুফান,
চরণ-আঘাতে উদ্গারে যেন
আহত বিশ্ব রক্ত-বান।
নিশ্বাসে তব পেঁজা-তুলো সম
উড়ে যাক মা গো এই ভুবন,
অসুরে নাশিতে হউক বিষ্ণু–
চক্র মা তোর হেম-কাঁকন।
টুঁটি টিপে মারো অত্যাচারে মা,
গলহার হোক নীল ফাঁসি,
নয়নে তোমার ধূমকেতু-জ্বালা
উঠুক সরোষে উদ্ভাসি।
হাসো খলখল দাও করতালি
বলো হরহর শঙ্কর!
আজ হতে মা গো অসহায়সম
ক্ষীণ ক্রন্দন সম্বরো।
মেখলা ছিঁড়িয়া চাবুক করো মা
সে চাবুক করো নঊ-তড়িৎ,
জালিমের বুক বেয়ে খুন ঝরে
লালে লাল হোক শ্বেত হরিৎ।
নিদ্রিত শিবে লাথি মারো আজ,
ভাঙো মা ভোলার ভাঙ-নেশা,
পিয়াও এবার অ-শিব গরল
নীলের সঙ্গে লাল মেশা।
দেখা মা আবার দনুজ-দলনী
অশিব-নাশিনী চণ্ডী-রূপ;
দেখাও মা ওই কল্যাণ-করই
আনিতে পারে কি বিনাশ-স্তূপ।
শ্বেত শতদলবাসিনী নয় আজ
রক্তাম্বরধারিণী মা,
ধ্বংসের বুকে হাসুক মা তোর
সৃষ্টির নব পূর্ণিমা।

গ্রন্থটির উৎসর্গ হচ্ছে- “বাঙলার অগ্নিযুগের আদি পুরোহিত সাগ্নিক বীর শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষ শ্রীশ্রীচরণারবিন্দেষু”। নিচে লেখা আছে “তোমার অগ্নি-পূজারী -হে- মহিমাম্বিত শিষ্য-কাজী নজরুল ইসলাম”। অরবিন্দ ঘোষের ভ্রাতা বারীন্দ্রকুমার ঘোষ বাংলা তথা ভারতের বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম নায়ক ছিলেন। বিপ্লবে বিশ্বাসী নজরুল তাই নিজেকে বারীন্দ্রকুমারের ‘-হে-মহিমান্বিত শিষ্য’ বলে উল্লেখ করে তাকেই তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেছিলেন।

অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য কবিতা:
- প্রলয়োল্লাস
- রক্তাম্বর-ধারিণী মা
- আগমণী
- ধূমকেতু
- কামাল পাশা
- আনোয়ার
- রণভেরী
- শাত-ইল-আরব
- খেয়াপারের তরণী
- কোরবানি
- মোহররম
আরও পড়ুন: