বাসন্তি কবিতা । সিন্ধু হিন্দোল কাব্যগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম

বাসন্তি কবিতাটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর সিন্ধু হিন্দোল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে ।  সিন্ধু হিন্দোল কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ । ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে এই গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থে মোট ১৯টি কবিতা রয়েছে। কাব্যগ্রন্থটি “বাহার ও নাহার”-কে (হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী ও শামসুন নাহার) উৎসর্গ করেন।

বাসন্তি কবিতা । সিন্ধু হিন্দোল কাব্যগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi nazrul islam ]

বাসন্তি কবিতা

কুহেলির দোলায় চড়ে
এল ওই কে এল রে?
মকরের কেতন ওড়ে
    শিমুলের হিঙুল বনে।
পলাশের গেলাস-দোলা
কাননের রংমহলা,
ডালিমের ডাল উতলা
    লালিমার আলিঙ্গনে॥
  
না যেতে শীত-কুহেলি
ফাগুনের ফুল-সেহেলি
এল কি? রক্ত-চেলি
    করেছে বন উজালা।
ভুলালি মন ভুলালি,
ওলো ও শ্যাম-দুলালি,
তমালে ঢাললি লালি,
    নীলিমায় লাল দেয়ালা॥


  
ওলো এ ব্যস্ত-বাগীশ
মাধবের নকল-নবিশ
মধুরাত নাই হতে — ইস
    মাধবীর কুঞ্জে হাজির!
বলি ও মদনমোহন!
না যেতে শীতের কাঁপন
এলো যে, থালায় এখন
    ভরিনি কুঙ্কুম আবির॥
  
হা-রা-রা হোরির গীতে
মাতিনি আজও শীতে
অধরের পিচকিরিতে
    পুরিনি পানের হিঙুল।

গাহেনি কোয়েল সখী —
'মর লো গরল ভখি!'
এখনই শ্যাম এল কি
    আসেনি অশোক শিমুল॥
  
মোরা সই বকছি মিছে
ওলো দ্যাখ শ্যামের পিছে
এসেছে কে এসেছে
    দুলে কার চেলির লালি।
তখনই বলেছি ভাই
আমাদের এ মান বৃথাই,
এলে শ্যাম আসবেনই রাই —
    শ্রীমতী শ্যাম দুলালি॥
  
পউষের রিক্ত শাখায়
বঁধু যেই বংশী বাজায়,
নীলা বন লাল হয়ে যায়,
    ফুলে হয় ফুলেল আকাশ।
এলে শ্যাম বংশীধারী
গোপনের গোপ-ঝিয়ারি
ফুল সব শ্যাম-পিয়ারি
    ভুলে যায় ছার গেহ-বাস॥
  
সাতাশে মাঘ-বাতাসে
যদি ভাই ফাগুন আসে
আঙনে রঙন হাসে
    আমাদের সেই তো হোরি!
শ্রীমতীর লাল কপোলে
দোলে লো পলাশ দোলে,
পায়ে তার পদ্ম ডলে
    দে লো বন আলা করি॥

বাসন্তি কবিতা । সিন্ধু হিন্দোল কাব্যগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সঙ্গীতকার। তার মাত্র ২৩ বৎসরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের জন্ম দেন। এই দুটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ও ভাঙ্গার গান সঙ্গীত। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একই সময় রচিত আরেকটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে কামাল পাশা- এতে ভারতীয় মুসলিমদের খিলাফত আন্দোলনের অসারতা সম্বন্ধে নজরুলে দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন আন্তর্জাতিক ইতিহাস-চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।

১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কবিতা-সংকলন অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতায় একটি নতুনত্ব সৃষ্টিতে সমর্থ হয়, এর মাধ্যমেই বাংলা কাব্যের জগতে পালাবদল ঘটে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরপর এর কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: “প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, শাত-ইল্‌-আরব, বিদ্রোহী, কামাল পাশা” ইত্যাদি। এগুলো বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তার শিশুতোষ কবিতা বাংলা কবিতায় এনেছে নান্দনিকতা খুকী ও কাঠবিড়ালি, লিচু-চোর, খাঁদু-দাদু ইত্যাদি তারই প্রমাণ।

 

বাসন্তি কবিতা । সিন্ধু হিন্দোল কাব্যগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi nazrul islam ]

সিন্ধু হিন্দোল কাব্যগ্রন্থ এর অন্যান্য কবিতাঃ

 

 

Leave a Comment