ক্রিটিক্যাল হিউম্যানিস্ট নজরুলকে নিয়ে আজকের আলোচনা। রেনেসাঁস শুধু কান্তিলিয়নের (১৪৭৮-১৫২৯) মতো ‘জেন্টলম্যান’ এর জন্ম দেয়নি, লরেঞ্জো ভাড়ার মতো ‘ক্রিটিক্যাল হিউম্যানিস্ট’এরও জন্ম দিয়েছিল। মধ্যযুগীয় জড়ত্ব ও মৃত ধর্মীয় অনুশাসনগুলির বিরুদ্ধে তখন শাণিত আক্রমণ চালানো হয়েছিল। বাংলার প্রথমার্ধের জাগরণে রামমোহন (১৭৭২-১৮৩৩), বিদ্যাসাগর (১৮২৩-১৮৯১) ইয়ং বেঙ্গলরা কায়েমী কানুন ও ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সমালোচনার তীর নিক্ষেপ করতে পিছপা হননি।
ক্রিটিক্যাল হিউম্যানিস্ট নজরুল
নজরুল হিন্দু-মুসলিম উভয় সমাজের সম্প্রদায়বুদ্ধি চারিত রিভাইভ্যালিস্টদের বিরুদ্ধে ক্রিটিক্যাল হিউম্যানিস্টের ভূমিকা পালন করেছেন। হিন্দু-মুসলমান প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন,
হিন্দুত্ব মুসলমানত্ব দুই সওয়া যায় কিন্তু তাদের টিকিত্ব দাড়িত্ব অসহ্য, কেননা দুটোই মারামারি বাধায়। টিকিত্ব হিন্দুত্ব নয়, ওটা হয়তো পণ্ডিত্ব। তেমনি দাড়ি ইসলামত্ব নয়, ওটা মোল্লাত্ব, এই দুই ‘ত্ব’ মার্কা চুলের গোছা নিয়ে এত চুলোচুলি ।
(হিন্দু-মুসলমান’, রুদ্রমঙ্গল, ১৩৩৩ )
নজরুল তাঁর কলমকে প্রায় অসিতে পরিণত করে ফেলেছিলেন। ব্যাঙ্গোবিদ্রুপে জ্বালাময়ী কবিতায় তিনি অন্যন্য। ‘জাতের নামে বজ্জাতি’ কবিতাটির কথা এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়।

নজরুল যেমন আক্রমণ করেছিলেন সমাজের প্রতিক্রিয়াশীল মানসিকতাকে সাম্প্রদায়িকতাকে; তেমনই ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধেও তাঁর আক্রমণ অব্যাহত ছিল। ফলে উভয়দিক থেকে তাঁর উপর আক্রমণ নেমে আসে। মোল্লারা যেমন তাঁকে চিহ্নিত করে ‘শয়তান’ অভিধায় তেমনই রাজদ্রোহের অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার বাজেয়াপ্ত করে তাঁর অনেকগুলি রচনা।
আরও দেখুনঃ