[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন

কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন। কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য প্রতিভা এবং অগ্নিবীণার সুরে সুরে যিনি বিদ্রোহের মন্ত্র জাগিয়েছিলেন, তিনিই বাংলাদেশের জাতীয় কবি। নজরুলের রাজনৈতিক জীবন তার সাহিত্যিক জীবন থেকে অবিচ্ছেদ্য, কারণ তার রচনায় জাতীয়তাবাদ, সাম্যবাদ, এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি তাঁর অটল বিশ্বাস প্রকাশ পেয়েছে। তার লেখায় এবং জীবনে রাজনৈতিক সংগ্রাম, সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, এবং মানবমুক্তির ডাক সবসময়ই গুরুত্ব পেয়েছে।

কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন

প্রাথমিক জীবন ও প্রভাব

কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক চেতনার বীজ বপন হয়েছিল তার শৈশবে এবং তরুণ বয়সে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে বেড়ে ওঠা, নজরুল সমাজের বঞ্চনা ও নিপীড়ন দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। তার নিজের জীবন ছিল কষ্টকর এবং দারিদ্র্যপীড়িত, যা তার রাজনৈতিক চেতনা গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।

বাঙালি সমাজের শোষণ ও অবমাননার বিরুদ্ধে নজরুলের প্রতিবাদী মনোভাব তার কাব্য ও সঙ্গীতে প্রকাশ পেয়েছিল। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর বিদ্রোহী চেতনা তাকে জনগণের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন

রাজনীতিতে প্রবেশ

নজরুলের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা মূলত তার সাহিত্যের মধ্য দিয়েই হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন এবং সেখানে তার সামরিক অভিজ্ঞতা তাকে রাজনৈতিকভাবে আরও সচেতন করে তোলে। যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তাকে সমাজের শোষণ ও দুর্দশার প্রতি গভীরভাবে সচেতন করে তোলে এবং তার লেখায় সমাজের প্রতি এই উদ্বেগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

১৯২২ সালে প্রকাশিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ “অগ্নিবীণা” তে নজরুল প্রথমবারের মতো তার রাজনৈতিক মতাদর্শকে সাহিত্যে প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থের কবিতাগুলি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আহ্বান জানায়। বিশেষ করে, “বিদ্রোহী” কবিতাটি তাকে বিদ্রোহী কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই কবিতায় তিনি সমাজের সব ধরনের অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন।

 

কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম

 

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও কারাবরণ

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান কণ্ঠস্বর। তার লেখনী এবং বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি বাঙালি জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তুলেছিলেন। তিনি ব্রিটিশ শাসকদের প্রতি তীব্রভাবে সমালোচনা করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দেন।

১৯২৩ সালে “ধূমকেতু” নামক একটি পত্রিকায় “আনন্দময়ীর আগমনে” নামে একটি কবিতা প্রকাশের কারণে নজরুলকে গ্রেফতার করা হয়। এই কবিতায় তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আহ্বান জানিয়েছিলেন। কারাগারে থাকাকালীন সময়েও নজরুল তার লেখনী চালিয়ে যান এবং আরও অনেক বিখ্যাত কবিতা ও গান রচনা করেন। কারাবাসে থেকেও তিনি সংগ্রাম চালিয়ে যান এবং তার আত্মা অটুট থাকে।

 

google news logo
আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদে বিশ্বাস

নজরুলের রাজনৈতিক দর্শন ছিল সমাজতন্ত্র এবং সাম্যবাদ দ্বারা প্রভাবিত। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য সমান অধিকার এবং মর্যাদা থাকা উচিত। তাঁর লেখায় তিনি বারবার সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের জন্য সমর্থন জানিয়েছেন। তার কবিতা, গান, এবং প্রবন্ধে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের প্রতি তাঁর গভীর প্রতিশ্রুতি ফুটে উঠেছে।

১৯২৫ সালে নজরুল কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন এবং সক্রিয়ভাবে তাদের কার্যক্রমে অংশ নেন। তিনি শ্রমিকদের অধিকার, নারী স্বাধীনতা, এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উপর গুরুত্বারোপ করেন। তার সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে তিনি সমাজের বিভিন্ন স্তরে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যান।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মানবতার ডাক

কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতি অটল বিশ্বাস। তিনি মুসলিম হলেও সব ধর্মের মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা এবং সম্মান ছিল অপরিসীম। তার রচনায় তিনি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির কথা বারবার উল্লেখ করেছেন এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন।

নজরুল তার কবিতা, গান, এবং প্রবন্ধের মাধ্যমে বারবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়েছেন। “হিন্দু-মুসলমান” শিরোনামের কবিতায় তিনি বলেছেন, “মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান,” যা তার অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতিফলন।

 

কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম

 

শেষের কথা

কাজী নজরুল ইসলামের রাজনৈতিক জীবন ছিল সংগ্রাম, বিপ্লব, এবং মানবতার প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর রচনা এবং কর্মে তিনি বারবার সামাজিক অন্যায়, শোষণ, এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন। তার রাজনৈতিক চেতনা তাকে কেবল একজন মহান কবি হিসেবে নয়, একজন সমাজসেবক এবং মানবতার পক্ষের যোদ্ধা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজও তাঁর আদর্শ ও চিন্তাধারা আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং সাম্যের পথে আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

আরও দেখুন:

Leave a Comment