নজরুলের কাব্যগীতি : বাংলা কাব্যগীতির ইতিহাস দীর্ঘদিনের। যে গানের বাণী ও সুর সমপ্রধান ভাস্বর তাকে কাব্যগীতি বলে। অর্থাৎ বাণীকে খর্ব করে সুর নয় এবং সুরকে খর্ব করে কথা নয়। কাব্যগীতিতে মূলত যে সকল সাঙ্গীতিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে নারুলের কাব্যগীতিতে তা সার্বিকভাবে বিদ্যমান। কাব্যগীতিকে অনেকে প্রেমগীতিও বলে থাকেন।
নজরুলের কাব্যগীতি । নজরুলের ভাবনা
নজরুলের আধুনিক পর্যায়ের গানকে অনেক নজরুল গবেষক কাব্যগীতি হিসাবে আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু এ দুটো পর্যায়ের গান ভিন্নবৈশিষ্ট্যের দায়ী রাখে। যার দর্শন একমাত্র কাজী নজরুলই উপস্থাপন করে গেছেন। নজরুলের কাব্যগীতির মৌলিক বিশ্লেষণে দেখা যায় গানগুলোতে আকর্ষণীয় বাণীর উপস্থাপন রয়েছে।
সুর ও তাল নির্বাচনে ও নান্দনিকাতার এতটুকু কমতি নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রয়েছে অন্য সুরকারদের পদচারনা যার ফলে সুর বিন্যাসে দেখা যায় বিভিন্নতা। নজরুলের কাব্য গীতিতে দুটি দর্শনতাত্ত্বিক অবস্থান লক্ষ করা যায় একটি জাগতিক এবং অন্যটি ঐশ্বরিক। গানগুলোতে শব্দ সংযোগের ফলে বাক্যের যে মাধুর্য রয়েছে তা সমমান সুরসংযোজনে পরিপূর্ণ রূপ পেয়েছে।
নজরুলের কোনো কোনো কাব্যগীতিতে রাগের ব্যবহারও দেখা যায়। শাস্ত্রীয় অনুভূতিগুলি তিনি খুব সূক্ষ্মভাবে প্রয়োগ করেছেন তাঁর কাব্যগীতিতে। তালের ব্যবহার লক্ষ করলে দেখা যায় প্রচলিত তালগুলিই রয়েছে নজরুলের কাব্যগীতির সাঙ্গীতিক চলনে। অবয়ব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় লঘুসঙ্গীত হিসাবে এ পর্যায়ের গানের চারটি বিভাগ রয়েছে স্থায়ী, অন্তরা, সঞ্চারী আভোগ।
লঘুসঙ্গীতের প্রচলিত নিয়ম অনুসারে বিভাগগুলো পরিবেশিত হয়। গীতিশৈলী প্রশ্নে দেখা যায় বিভাগুলো যেভাবে বিন্যস্ত আছে ঠিক সেভাবেই এ পর্যায়ের গান পরিবেশিত হয়।
কাব্যগীতির মূল বৈশিষ্ট্য হলো বাণীর সাথে মিলেমিশে সুরপ্রক্রিয়াটি শিল্পী পরিবেশনায় খুব গভীর ভাবে আকৃষ্ট করবার প্রবণতা, যা বাণী ও সুরের সমান প্রভাবের ফলে মনের ভাবকে উজ্জীবিত করে তোলে।
এখানেই কাব্যগীতি মহিয়সী, প্রাণবন্ত এবং সুরলালিত্যে বহুমুখী। সে প্রেক্ষাপটে কাজী নজরুলকে কাব্যগীতি রচনায় শ্রেষ্ঠ বলেও অনেক নজরুল গবেষক একমত। অতএব নজরুলের কাব্যগীতি আমাদের দিয়েছে সাঙ্গীতিক পরিপূর্ণতা এবং বাংলাগানকে এনে দিয়েছে সমৃদ্ধি।
আরও দেখুনঃ