কাজী নজরুলের গানের বিভিন্ন পর্যায়: নজরুল সঙ্গীত বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান কবি ও সংগীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলাম লিখিত গান। তার সীমিত কর্মজীবনে তিনি ৩০০০-এরও বেশি গান রচনা করেছেন। এসকল গানের বড় একটি অংশ তারই সুরারোপিত। তার রচিত চল্ চল্ চল্, ঊর্ধ্বগগণে বাজে মাদল বাংলাদেশের রণসংগীত। তার কিছু গান জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়েছিল যার মধ্যে রয়েছে গানের মালা, গুল বাগিচা, গীতি শতদল, বুলবুল ইত্যাদি। পরবর্তীকালে আরো গান সংগ্রন্থিত হয়েছে।
সকল নজরুলগীতি ১০টি ভাগে বিভাজ্য। এগুলো হলোঃ ভক্তিমূলক গান, প্রণয়গীতি, প্রকৃতি বন্দনা, দেশাত্মবোধক গান, রাগপ্রধান গান, হাসির গান, ব্যাঙ্গাত্মক গান, সমবেত সঙ্গীত, রণ সঙ্গীত এবং, বিদেশীসুরাশ্রিত গান।

কাজী নজরুলের গানের বিভিন্ন পর্যায় । নজরুলের ভাবনা
নজরুলের সুর ও সঙ্গীত জগতের দিকে এখন দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। নজরুল অসংখ্য গান রচনা করেছেন, অসংখ্য সুরও সৃষ্টি করেছেন। আর গানগুলি এক গোত্রের নয় বিভিন্ন শ্রেণীর।
তিনি একাধারে রচনা করেছেন গজল গান, কাব্য সঙ্গীত বা প্রেমগীতি, ঋতু-সঙ্গীত, খেয়াল, রাগপ্রধান, হাসির গান, কোরাস গান, দেশাত্মবোধক গান, গণসঙ্গীত-শ্রমিক-কৃষকের গান, ধীবরের গান, ছাদপেটার গান, তরুণ বা ছাত্রদলের গান, মার্চ-সঙ্গীত বা কুচকাওয়াজের গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, নারী জাগরণের গান, মুসলিম জাতির জাগরণের গান, শ্যামা সঙ্গীত, কীর্তন, বৈষ্ণবপদাবলী, অন্যান্য ভক্তিগীতি, ইসলামী সঙ্গীত, শিশু সঙ্গীত, নৃত্য-সঙ্গীত, লোকগীতি-ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, সাম্পানের গান, ঝুমুর, সাঁওতালী, লাউনী, কাজরী, বাউল, মুর্শেদী এবং আরো নানা বর্ণের গান।

বিভিন্ন বিদেশী সুরের আদলে রচিত গানের সংখ্যাও কম নয়। এছাড়া লুপ্ত বা লুপ্তপ্রায় রাগ-রাগিণীকে অবলম্বন করে ‘হারামণি’ পর্যায়ের গান এবং নতুন সৃষ্ট রাগ-রাগিণীরও উপর ভিত্তি করে লেখা ‘নবরাগ’ পর্যায়ের গানগুলি নজরুলের সাঙ্গীতিক প্রতিভার অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় বহন করে।
