নজরুলের বাল্যকালঃ কবি নজরুল ইসলামের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়েছে দারিদ্র্যের সঙ্গে অত্যন্ত কঠোর সংগ্রাম করে। ১৩১৪ সালের (১৯০৮ খ্রিস্টাব্দ) ৭ চৈত্র তারিখে তাঁর পিতৃবিয়োগ হয়। পিতার মৃত্যুর পর কাজী পরিবারে নেমে আসে চরম দারিদ্র্যের ছায়া। তাই মাত্র দশ বছর বয়সে (১৩১৬ সাল ১৯০৯। বালক নজরুলকে গ্রামের মক্তবের নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায় পাস করেই নিতে হয় সেই মক্তবেরই শিক্ষকতার ভার। ওই সময় শিক্ষকতা ছাড়াও আশেপাশের গ্রামে মোল্লাগিরি এবং পাহলোয়ানের মাজার শরীফের খাদেমগিরি করতে হয়েছে তাঁকে। করতে হয়েছে গ্রামের মসজিদের ইমামতির কাজও।

নজরুলের বাল্যকাল । নজরুলের ভাবনা
কাজী বজলেকরিম নাম তাঁর এক পিতৃব্য ফারসি সাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি নিয়মিত ফারসি কাব্য চর্চা করতেন। এই পিতৃব্যের সাহচর্যে ও প্রেরণায় নজরুল সে সময় ফারসি-উর্দূ মিশ্রিত মুসলামানী বাংলায় কবিতা লেখা শুরুকরেন।

তাঁর ওই সময়কার একটি রচনা-
১. মেরা দিল বেতার কিয়া
তেরে আক্রয়ে কামান
জ্বলা যাতা হ্যায়
ইশক মে জান পেরেশান,
হেরে তোমার ধ্বনি,
চন্দ্র কলঙ্কিনী
মরি কি যে বদনের শোভা
মাতোয়ারা প্রাণ
বুলবুল করতে এসেছে
তাই যে মধু পান।

এই তাঁর কবিতা লেখার প্রথম হাতেখড়ি। সেই ছেলেবেলা থেকেই গরীব সংসারের অনেকখানি দায়িত্ব তার উপর এসে পড়েছিল। তাই গ্রামে মক্তবের ওই সামান্য আয়ে যখন কোনো রকমেই সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছিল না তখন তিনি গ্রাম্য লেটোর দলে গান এবং পালা রচনা করে অর্থপার্জন করার কাজে লাগেন। বয়স তখন তাঁর ১২-১৩ বছরের বেশি নয়।
