সৈনিক নজরুলঃ ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত প্রদেশের নওশেরায় যান। প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন।
তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগ থেকে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর। এই সময়ের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। উক্ত রেজিমেন্টের পাঞ্জাবী মৌলবির কাছে তিনি ফার্সি ভাষা শিখেন।

সৈনিক নজরুল । নজরুলের ভাবনা
এছাড়া সহ-সৈনিকদের সাথে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সঙ্গীতের চর্চা অব্যাহত রাখেন, আর গদ্য-পদ্যের চর্চাও চলতে থাকে একই সাথে।
করাচি সেনানিবাসে বসে নজরুল যে রচনাগুলো সম্পন্ন করেন তার মধ্যে রয়েছে, বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী (প্রথম গদ্য রচনা), মুক্তি (প্রথম প্রকাশিত কবিতা); গল্প: হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে, কবিতা সমাধি ইত্যাদি। এই করাচি সেনানিবাসে থাকা সত্ত্বেও তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন।

কবির সৈনিক জীবন কম বেশি আড়াই বছরের মধ্যে (১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষ থেকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের মার্চ পর্যন্ত) সীমাবদ্ধ। সৈনিক জীবনের কঠোর নিয়ম- শৃঙ্খলার মধ্যে থেকেও কবির সাহিত্য চর্চা স্তব্ধ হয়ে যায় নি, বরং বলা চলে এ জীবনেই তাঁর প্রকৃত সাহিত্য চর্চা শুরু হয়।
তাঁর প্রথম গল্প ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ এবং প্রথম কবিতা ‘মুক্তি’-এ-জীবনেই রচিত। ‘বাউণ্ডেলের আত্মকাহিনী’ প্রকাশিত হয় মাসিক সওগাতের ১ম বর্ষের ৭ম সংখ্যায় (জৈষ্ঠ্য, ১৩২৬ সাল) এবং ‘মুক্তি’ প্রকাশিত হয় ১৩২৬ সালের শ্রাবণ মাসের ত্রৈমাসিক ‘বঙ্গীয় মুসলমান-সাহিত্য পত্রিকা’য়।

১৩২৬ সালের আশ্বিন সংখ্যা সওগাতে ‘কবিতা- সমাধি’, ভাদ্র সংখ্যায় ‘স্বামীহারা’ এবং ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’র কার্তিক ও মাঘ (১৩২৬ সাল) সংখ্যায় যথাক্রমে প্রকাশিত হয় ‘হেনা’ ও ‘ব্যথার দান’ গল্প দুটি। এ সময় গল্প লেখায় নজরুল বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন এবং পাঠক মহলে গল্প লেখক হিসেবেই পরিচিত হয়েছিলেন।

করাচীতে অবস্থান-কালীন, সৈনিক জীবনেই “আরবসাগরের বিজনবেলায় বসে কবি লিখেছিলেন ‘রিক্তের বেদন’ গল্পগ্রন্থের গল্পগুলি। আর লিখেছিলেন ‘বাঁধনহারা’ পত্রোপন্যাসের বেশ কিছু অংশ।
