কাজী নজরুল ইসলাম একজন সার্থক গীতিকার ও সুরকার : কালের বিবর্তনে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সঙ্গীত প্রতিভায় যারা জন্মগ্রহন করেছেন। নজরুল তাঁদের মধ্যে একজন। ছোটবেলা হতেই নজরুলের মধ্যে সঙ্গীতের আবেশ লক্ষ করা যায়। যখন নজরুল তার নাম লিখতেন নজরুল ইসলাম।
কাজী নজরুল ইসলাম একজন সার্থক গীতিকার ও সুরকার
পারিবারিক অবকাঠামোতে সাঙ্গীতিক অবস্থান সুদৃঢ় না হলেও নজরুল তার প্রতিভার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন। বিভিন্ন তথ্য অনুসারে এটা প্রমাণিক যে লেটোদলে থাকা অবস্থায়ই নজরুলের সঙ্গীত রচনা ও সুরারোপ করবার ভিত্তি স্থাপিত হয় দারিদ্র্যতা।
নজরুলকে ঘিরে থাকলেও গীত রচনা ও সুর সংযোগের ক্ষেত্রটি সব সময়ই সচল ছিল। পরবর্তীতে রুটির দোকানে কাজ দোকানে কাজের ফাকেও নজরুল গান রচনাও কবিতা লিখতেন। ফলে শৈশবইে তিনি নিজেকে গীতিকার ও সুরকার নজরুল হিসাবে প্রমাণ করেছেন।
আসানসোল হতে নজরুল ময়মনসিংহের ত্রিশালে দরিরামপুর হাইস্কুলে ভর্তি হন-পরবর্তীতে শিয়ারশোল রাজ হাইস্কুলে। যতদিন ময়মনসিংহে ছিলেন সঙ্গীত রচনা ও সুরসংযোজনের ক্ষেত্রে নজরুলের মনসংযোগের এতটুকু ভাটা পরেনি। ১৯১৭ সালে নজরুল ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচী চলে যান সেখানেও নজরুল গীত রচনা করেন। ক্রমান্বয়ে নজরুলের গীতের সংখ্যা বাড়াতে থাকে।
গানের বাণী রচনায় নান্দনিকতা সুরের মোহনীয়রূপ সঙ্গীতপ্রেমীদের আকৃষ্ট করতে থাকে। পর্যায়ভিত্তিক সঙ্গীত রচনার ক্ষেত্রে নজরুল সবাইকে ছাড়িয়ে যান। যদিও গানের সুরের অবচিত্র প্রশ্নে অনক গুণী সুরকার নজরুলের গানে সুরস্থাপন করেন।
নজরুল পর্যায়ভিত্তিক গীত রচনার ক্ষেত্রে সুরের ললিত্য প্রসঙ্গটি নিয়ে নিবিড়ভাবে গবেষনা করেছেন ফলে তার গানের বাণীর আবেদন হিসাবে সুরের অবস্থনাটি নির্ণিত হয়েছে। তাই নজরুলসঙ্গীতে সুর মাধুর্য, শব্দনির্বাচন, রাগ নির্বাচন প্রভৃতি বিষয়গত রূপটি প্রতিপদক্ষেপে সুস্পষ্ট।
নজরুলের গানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পরিশিলিত ধারা। নজরুলের গীতরচনা বিশেষ করে ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল, ঠুমরী, টপ্পা, অপ্রচলিত রাগ, দক্ষিণিরাগ প্রভৃতি বিষয়ক গানগুলি বাণী ও সুরের অবস্থান এবং রাগ নির্বাচনে সঠিক রূপ পেয়েছে।
এ ছাড়াও নজরুলের গজল, ভজন, কীর্তন, ইসলামিক, শ্যামা, উদ্দীপক, বিদেশী সুর, লোকসঙ্গীত, কাব্যগীতি প্রভৃতি পর্যায়ের গানগুলোতে বাণী ও সুরের অপূর্ব সম্মিলন পরিলক্ষিত হয়। গানের কাব্যিক ধারার সাথে সুরের আবশ্যকীয় যে একটা রূপ রয়েছে তা নজরুলের গানে সর্বদাই উপস্থাপিত। নজরুল সকল শ্রেণীর মানুষের জন্যে গান রচনা করে গেছেন।
তাই নজরুলকে উপলবদ্ধি করার জন্য সকলের সুযোগ রয়েছে। সঙ্গীত রচনার ক্ষেত্রে তিনি মানবদর্শনের বাহ্যিক রূপটি বিভিন্নভাবে সংযোজন করেছেন তার গানে, তাইতো কাজী নজরুল ইসলাম একজন সার্থক গীতিকার ও সুরকার হিসাবে বিশ্বের সঙ্গীত বৃত্তে নিজেকে সংযুক্ত করতে পেরেছিলেন। এবং তাঁর রচিত গান নজরুলসঙ্গীত হিসাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।
আরও দেখুনঃ