নজরুলের দুটি লোকসঙ্গীতের গীতিউৎস : লোকসঙ্গীতকে বাংলা সঙ্গীতের আদি সঙ্গীত হিসেবে ধরে নেয়া যায়। প্রমাণিক উপস্থাপনের ভিত্তিতে পঞ্চ-গীতি কবির সঙ্গীতের ধারায় লোকসঙ্গীত পর্যায় গানের উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। পঞ্চ-গীতি কবির গানের মধ্যে নজরুলের লোকসঙ্গীতের বাহ্যিক প্রকাশ ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য বহন করে।
নজরুলের দুটি লোকসঙ্গীতের গীতিউৎস । নজরুলের ভাবনা
লোকসঙ্গীতের বৈচিত্র্য সাধনের জন্য তিনি বিভিন্ন অবস্থান থেকে বাণী ও সুর সংগ্রহ করেছিলেন এবং তার স্বার্থক রূপও পেয়েছিলেন। আমরা নিম্নে তার রচিত দু’টি লোকসঙ্গীতের উৎস বর্ণনা করব যাতে করে সঠিক তথ্য বিন্যস্ত হয়।
(ক) ‘নদীর নাম সই অজানা.
গ্রন্থ : বনগীতি
স্বরলিপি : কলগীতি
রেকর্ড : ০৬
শিল্পী : আব্বাস উদ্দিন আহমেদ
পর্যায় : লোকসঙ্গীত (ভাওয়াইয়া)
তাল : কাহারবা
গীতি উৎস :
আব্বাস উদ্দিন আহমেদের জন্ম কুচবিহার। আর পল্লীগীতি এবং ভাওয়াইয়ার জন্য কুচবিহার বিখ্যাত। একদিন রিহারসেল রুমে বসে আপন মনে আব্বাস উদ্দিন এই ভাওয়াইয়া গানটি গাইছিলেন-
“নদীর নাম সই কচুয়া মাছ মারে মাছুয়া; মুই নারি দিচোং ছ্যাকা পাড়া” এ সময় নজরুল দরজার পাশে দাড়িয়ে সুরটি শোনেন এবং মুগ্ধ হয়ে পড়েন। আব্বাস উদ্দিনকে তিনি বারবার গানটি গাইতে বলেন। কবির মনে তখন একই সুরের নতুন কাঠামো জন্ম নিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি এই গানটি লিখে ফেললেন। সম্ভবত ভাওয়াইয়া সুরে রচিত এটাই নজরুলের প্রথম গান। কবির “বনগীতি” গ্রন্থে গানটি প্রথম স্থান পায়। এবং এটি মেগাফোনে রেকর্ড করা হয় আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে। যার রেকর্ড নম্বর : জে এন জি ০৬।
(খ) “পদ্ম দীঘির ধারে ধারে ও.
গ্রন্থ : বনগীতি
রেকর্ড নং : ০৬
স্বরলিপি : সুর মল্লহার
শিল্পী : আব্বাস উদ্দিন আহমেদ
পর্যায় : লোকগীতি (ভাওয়াইয়া)
তাল : দাদ্রা
গীতি উৎস :
আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠে “তেরষা নদীর পারে ও……..” এই ভাওয়াইয়া গানটি শুনে নজরুল একই সুরে “পদ্ম দীঘির ধারে ধারেও গানটি রচনা করেন। এটিতেও মেগাফোনে কণ্ঠ দেন আব্বাস উদ্দিন আহমেদ। যার রেকর্ড নম্বর : জে এন জি ০৬। আব্বাস উদ্দিনের মতে এরপর থেকেই পল্লীগীতি রচনায় নজরুলের বৈশিষ্ট্য ফুঠে ওঠে।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে এ কথা প্রতীয়মান হয় যে, বাংলা গানের এই মহান প্রতিভা লোকসঙ্গীতেও সমান পারদর্শী ছিলেন। এবং গ্রাম বাংলার লোকজ রূপকে সুচার রূপে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আরও দেখুনঃ