রণভেরী কবিতা । অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম
রণভেরী কবিতাটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। অগ্নিবীণা হলো বিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা কাব্যগ্রন্থ, যা নজরুলের কবিতার আধুনিকতা ও বিপ্লবী ভাবধারার সুদৃঢ় পরিচায়ক।
এই কাব্যগ্রন্থটি ১৩২৯ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে (অক্টোবর, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দ) প্রথম প্রকাশিত হয় এবং এতে মোট বারোটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গ্রন্থের শুরুতেই বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে উৎসর্গ করে লেখা একটি উৎসর্গ কবিতাও রয়েছে, যা পুরো কাব্যগ্রন্থের বিপ্লবী ও প্রেরণাদায়ক ভাবধারাকে আরও দৃঢ় করে।
রণভেরী কবিতাটি তার শৌর্য ও উত্তেজনাপূর্ণ ভাষায় যুদ্ধের মর্যাদা, দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে বর্ণনা করে। কবিতাটি নজরুলের বিদ্রোহী মনোভাব ও সাহসিকতার নিদর্শন, যা পরবর্তীতে বাংলা সাহিত্যে এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে।
অগ্নিবীণা কবিতার মাধ্যমে কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা কবিতাকে নতুন দিশা দেখান, যেখানে ব্যাক্তিগত আর সামাজিক সংগ্রাম ও বিপ্লবী চেতনাকে একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে তুলে ধরা হয়।
রণভেরী কবিতা
[গ্রীসের বিরুদ্ধে আঙ্গোরা-তুর্ক-গভর্ণমেন্ট যে যুদ্ধ চালাইতেছিলেন, সেই যুদ্ধে কামাল পাশার সাহায্যের জন্য ভারতবর্ষ হইতে দশ হাজার স্বেচ্ছা-সৈনিক প্রেরণের প্রস্তাব শুনিয়া লিখিত]
ওরে আয়!
ঐ মহা-সিন্ধুর পার হতে ঘন রণ-ভেরী শোনা যায়–
ওরে আয়!
ঐ ইস্লাম ডুবে যায়!
যত শয়তান
সারা ময়দান
জুড়ি খুন তার পিয়ে হুঙ্কার দিয়ে জয়-গান শোন্ গায়!
‘অগ্নি-বীণা’ প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা ছিল অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং এঁকেছিলেন তরুণ চিত্রশিল্পী বীরেশ্বর সেন। বইটির তৎকালীন মূল্য ছিল ৩ টাকা। ৭ নং প্রতাপ চ্যাটার্জি লেন থেকে গ্রন্থকার কর্তৃক গ্রন্থটি মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। প্রাপ্তিস্থান হিসেবে গ্রন্থে লেখা ছিল: ‘আর্য পাবলিশিং হাউস, কলেজ স্ট্রিট, মার্কেট (দোতলায়)’। গ্রন্থটি ছাপা হয় মেটকাফ প্রেস, ৭৯ নং বলরাম দে স্ট্রিট, কলিকাতা থেকে। দাম এক টাকা।
গ্রন্থটির উৎসর্গ হচ্ছে- “বাঙলার অগ্নিযুগের আদি পুরোহিত সাগ্নিক বীর শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষ শ্রীশ্রীচরণারবিন্দেষু”। নিচে লেখা আছে “তোমার অগ্নি-পূজারী -হে- মহিমাম্বিত শিষ্য-কাজী নজরুল ইসলাম”। অরবিন্দ ঘোষের ভ্রাতা বারীন্দ্রকুমার ঘোষ বাংলা তথা ভারতের বিপ্লববাদী আন্দোলনের অন্যতম নায়ক ছিলেন। বিপ্লবে বিশ্বাসী নজরুল তাই নিজেকে বারীন্দ্রকুমারের ‘-হে-মহিমান্বিত শিষ্য’ বলে উল্লেখ করে তাকেই তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ উৎসর্গ করেছিলেন।