কোলকাতা বেতার কেন্দ্র এবং নজরুল: ১৯৩৮ সালে কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হন। সেখানে তিনটি অনুষ্ঠান যথাক্রমে ‘হারামণি’, ‘নবরাগ মালিকা’র জন্য তাকে প্রচুর গান লিখতে হতো। ১৯৪০ সালে কোলকাতা বেতার কেন্দ্র নজরুলকে গীতরচনা ও সুরসংযোজনের দায়িত্ব দেন।
কোলকাতা বেতার কেন্দ্র এবং নজরুল । নজরুলের ভাবনা
এ সময় কোলকাতা বেতার কেন্দ্র হতে নজরুল দুটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। তা হলো (১) হারামনি (২) নবরাগ মালিকা
হারামনি :
নজরুল অসংখ্য লুপ্ত রাগ বা হারিয়ে যাওয়া রাগের উপর ভিত্তি করে সঙ্গীত রচনা ও তার প্রচার করতেন হারামনি অনুষ্ঠানে।
নবরাগ মালিকা :
নতুন রাগ সৃষ্টি করে তার উপর ভিত্তি করে রচিত গানগুলো নজরুল নবরাগ মালিকা অনুষ্ঠানে প্রচার করতেন । ছন্দসী, কাফেলা, কাবেরীতীরে প্রভৃতি গীতিনাট্যগুলো কেবল বেতারে প্রচারের জন্য রচিত হয়েছিল।
‘হারামণি’ অনুষ্ঠানটি কলকাতা বেতার কেন্দ্রে প্রতি মাসে একবার করে প্রচারিত হতো যেখানে তিনি অপেক্ষাকৃত কম প্রচলিত ও বিলুপ্তপ্রায় রাগরাগিণী নিয়ে গান পরিবেশন করতেন। উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি কোনো একটি লুপ্তপ্রায় রাগের পরিচিতি দিয়ে সেই রাগের সুরে তার নিজের লেখা নতুন গান পরিবেশন করতেন।
এই কাজ করতে গিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম নবাব আলী চৌধুরীর রচনায় ‘ম আরিফুন নাগমাত’ ও ফার্সি ভাষায় রচিত আমীর খসরুর বিভিন্ন বই পড়তেন এবং সেগুলোর সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রাগ আয়ত্ত করতেন। এসব হারানো রাগের ওপর তিনি চল্লিশটিরও বেশি গান রচনা করেন।
তবে স্বভাবে অগোছালো হওয়ায় নজরুল টুকরো কাগজে এসব গান লিখলেও সেগুলো মাসিক ভারতবর্ষের সঙ্গীত বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জগৎ ঘটক একটি মোটা বাঁধানো খাতায় স্বরলিপিসহ তুলে রাখতেন। বাংলা গানের দুর্ভাগ্য যে, এই সংকলিত খাতাটি পরবর্তী সময়ে হারিয়ে যায় যার বিজ্ঞপ্তি তিনি সে সময়কালের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে দিয়েছিলেন কিন্তু সেটি আর পাওয়া যায়নি।
আরও দেখুনঃ