কাজী নজরুল ইসলামের ‘পউষ’ কবিতাটি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘দোলনচাঁপা’ (প্রকাশকাল: ১৯২৩)-এর অন্তর্গত। এই কবিতায় কবি বাংলার গ্রামীণ জীবনের শীতকালীন রূপ, কৃষকের পরিশ্রম, প্রকৃতির রুক্ষ অথচ মমতাময় রূপকে এক জীবন্ত চিত্রের মতো ফুটিয়ে তুলেছেন।
‘পউষ’ শুধু একটি ঋতুচিত্র নয়, এটি বাংলার কৃষিনির্ভর সমাজের এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি। পউষ মাসে মাঠে ধান কাটা, খেতের ধোঁয়া, গ্রামীণ মানুষের কর্মব্যস্ততা, আর প্রকৃতির নিস্তব্ধ সৌন্দর্য—সবই কবির কলমে এক অপূর্ব ছন্দে বর্ণিত হয়েছে।
এই কবিতায় নজরুল একদিকে যেমন প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক তুলে ধরেছেন, অন্যদিকে দেখিয়েছেন শ্রমজীবী মানুষের অন্তর্গত আনন্দ ও পরিতৃপ্তির অনুভূতি। তাঁর ভাষা সহজ, ছন্দ মসৃণ, আর চিত্রকল্প গ্রামীণ জীবনের সজীব রঙে রঞ্জিত।
‘পউষ’ কবিতাটি নজরুলের প্রকৃতিচেতনা, বাস্তববোধ এবং কবির মানবিক দৃষ্টির এক উজ্জ্বল নিদর্শন—যা বাংলা কবিতায় ঋতু ও গ্রামীণ জীবনের চিত্রায়ণে এক অনন্য সংযোজন।
পউষ কবিতা
পউষ এলো গো!
পউষ এলো অশ্র”-পাথার হিম পারাবার পারায়ে
ঐ যে এলো গো-
কুজঝটিকার ঘোম্টা-পরা দিগন-রে দাঁড়ায়ে।
সে এলো আর পাতায় পাতায় হায়
বিদায়-ব্যথা যায় গো কেঁদে যায়,
অস্ত-বধূ (আ-হা) মলিন চোখে চায়
পথ-চাওয়া দীপ সন্ধ্যা-তারায় হারায়ে।
পউষ এলো গো-
এক বছরের শ্রানি- পথের, কালের আয়ু-ক্ষয়,
পাকা ধানের বিদায়-ঋতু, নতুন আসার ভয়।
পউষ এলো গো! পউষ এলো-
শুক্নো নিশাস্, কাঁদন-ভারাতুর
বিদায়-ক্ষণের (আ-হা) ভাঙা গলার সুর-
‘ ওঠে পথিক! যাবে অনেক দূর
কালো চোখের কর”ণ চাওয়া ছাড়ায়ে।
