একজন স্বার্থক নজরুল সঙ্গীত শিল্পীর গুণাবলি : নজরুলসঙ্গীত লঘু প্রকৃতির সঙ্গীত হলেও এর বাহ্যিক প্রকাশ একটি ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য বহন করে। নজরুলসঙ্গীত গাইবার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতার জন্য শিল্পীর দু’টি বিশেষ দিক থাকা প্রয়োজন। যথা-
(১) স্বর সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ও (২) সুর বিন্যাসে পরিপূর্ণতা।
একজন স্বার্থক নজরুল সঙ্গীত শিল্পীর গুণাবলি । নজরুলের ভাবনা
নজরুলসঙ্গীত শিল্পীর গঠন প্রণালী তৈরিতে এই দু’টি বিশেষ দিক অতীব জরুরি বিষয় । একজন স্বার্থক নজরুলসঙ্গীত শিল্পীর নিম্ন লিখিত গুনাবলি থাকা বিশেষ প্রয়োজন-
(১) শুদ্ধ বাণী বলার অভ্যাস ।
(২) যেহেতু নজরুলসঙ্গীত শাস্ত্রীয়সঙ্গীত প্রভাবিত সে কারণে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বিশেষ পারদর্শিতা আবশ্যকীয় ।
(৩) নজরুল তার গানে গায়কী স্বাধীনতা দিয়েছেন বটে তবে বিশেষ পারদর্শিতা ছাড়া কোনো রকম গায়কী উপস্থাপন না করাই সমীচীন ।
(৪) সুর বৈচিত্র্যের বিশেষ বৈশিষ্ট্য নজরুলের গান। সূক্ষ্ম কারুকার্যের মাধ্যমে তার প্রকাশ ঘটাতে হলে পরিপক্কতা এবং কন্ঠের মাধুর্য্য বেশ প্রয়োজন ।
(৫) প্রতিটি গানের স্বার্থক রূপ দেবার জন্য গানের বাণী অনুধাবনের মাধ্যমে পরিবেশন করা উচিত।
(৬) সুর বিশিষ্ট্য কণ্ঠ হলেই নজরুলসঙ্গীতের গায়কী পরিপূর্ণতা পায় না। কেননা, নজরুল সৃষ্ট প্রতিটি পর্যায়ের গানের পরিবেশনায় একটি নিজস্ব গায়কী বা ঢং রয়েছে যা কেবলমাত্র নজরুলসঙ্গীত চর্চার মাধ্যমেই অর্জন এবং তা পরিবেশন সম্ভব।
(৭) বাংলা গানের ঐতিহ্যগত দিক ধারণ করে আছে কাজী নজরুলের গান । তাই, এর প্রকাশধর্মী বৈশিষ্টে শিল্পীর উচিত কাজী নজরুলের স্বকীয়তা রক্ষা করা ।
(৮) আদি রেকর্ড ভিত্তিক সুরের ধারায় নজরুলসঙ্গীত পরিবেশন করতে হবে।
(৯) শুদ্ধবাণীর সমন্বয় সাধন (আদি রেকর্ড ভিত্তিক)
(১০) যতটুকু সম্ভব গানের উৎস্য এবং প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারনা রাখা ।
(১১) ধর্মীয় বিষয় ভিত্তিক গানের ক্ষেত্রে নিজের ভাব তথা দর্শন তাত্ত্বিক উপস্থাপন প্রয়োজন ।
(১২) দেশী-বিদেশী ভাষার সংমিশ্রণে রচিত নজরুলসঙ্গীত পরিবেশনায় শিল্পীর ভাষাগত অবস্থান ।
(১৩) মন্ত্র, মধ্য ও তার সপ্তকে বিচরণ করার ক্ষমতা।
(১৪) ধ্রুপদ, ধামার, খেয়াল, ঠুমরী, টপ্পা এই পাঁচটি পর্যায়ের গানের পরিবেশনায় শিল্পী দক্ষতার পরিচয় ঘটে।
(১৫) নজরুল সৃষ্ট তাল ও রাগ সম্পর্কে বিশেষ ধারণা থাকা আবশ্যক ।
(১৬) শাস্ত্রীয় তাল সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান ধারণ প্রয়োজন ।
(১৭) নজরুলসঙ্গীতে অন্য সুরকার সম্পর্কে শিল্পীর কিছুটা হলেও জানা বাঞ্ছণীয় ।
(১৮) নজরুলসঙ্গীত পরিবেশনের ক্ষেত্রে শিল্পীর বাণী ও সুর সম্পর্কে বিশেষ ধারণা প্রয়োজন ।
(১৯) নজরুলসঙ্গীত পরিবেশনায় সুর ও বিস্তারের ক্ষেত্রে নজরুল ইনস্টিটিউট প্রকাশিত স্বরলিপি লক্ষ করা উচিত।
(২০) নজরুলের রচনা সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণা সম্পর্কে শিল্পীর সামান্যতম হলেও জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
(২১) নজরুল ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত ।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, একজন স্বার্থক নজরুলসঙ্গীত শিল্পীর উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন ।
আরও দেখুনঃ