নজরুলের ছাদপেটানো গান 

নজরুলের ছাদপেটানো গান নিয়ে আজকের আলোচনা। লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন বিষয়গুলি রচনার ক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলাম খুলে দিয়েছেন এক নব দিগন্ত। তাঁর হাতে লোকসঙ্গীত শুধুমাত্র নৈসর্গিক ও সাদামাটা জীবনের সুখ দুঃখের গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ না থেকে বিস্তার লাভ করেছে অনেক বিস্তৃত জগতে।

 

নজরুলের ছাদপেটানো গান 

 

নজরুলের ছাদপেটানো গান

 

কবি লোকসঙ্গীতের বহিরাঙ্গিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে বজায় রেখে, তাঁর রচিত গানকে হাতিয়ার করে এগিয়ে গেছেন মানুষের অনেক না বলা কথাকে সকলের সামনে প্রকাশ করতে, উদ্বুদ্ধ করতে মৃতপ্রায় ভীতু মানুষগুলোকে। একটি বিশেষ ধরনের শ্রমসঙ্গীতের মাধ্যমে কবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন ছাদ পেটানোর গানে মহিলা শ্রমিকদের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনচর্চা।

যদিও শ্রমসঙ্গীত সাধারণভাবে সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয় শ্রমের কষ্টকে ভুলে থাকার জন্য, কিন্তু নজরুল রচিত ছাদ পেটানোর গানটি বহন করে এক আলাদা বৈশিষ্ট্য। এখানে নাটকের সংলাপের মত সুরের মাধ্যমে মহিলা শ্রমিকেরা ব্যক্ত করেছে তাদের জীবন যন্ত্রণার কথা। এই গানে জীবনের চরম সত্য কথাগুলি বলতে গিয়ে কোন শ্রীলতা রক্ষার চেষ্টা কৰি করেননি। একেবারে বাস্তব জগতের ছবিকে তুলে এনেছেন শ্রমসঙ্গীতের আকৃতিতে

“সমবেত ॥ সারাদিন পিটি কার দালানোর
পেট ভরে ভাত পাই না, ধরে আসে হাত গো ।

 

নজরুলের ছাদপেটানো গান 

 

১ম ॥ তোর ঘরে আজ কি রান্না হয়েছে,
২য় ॥ ছেলে দুটো ভাত পায়নি, পথ চেয়ে রয়েছে।
৩য় ॥ আমিও ভাত রাঁধিনি দেখ না চুল বাঁধিনি
শ্বাশুড়ি মান্ধাতার বুড়ি, মন্দ কথা কয়েছে।
৪থ ॥ আমার ননদ বড় দজ্জাল, বজ্জাত গো
১ম ॥ এত খায় তবু ওদের বউগুলো সুটকো
২য় ॥ ছেলেগুলো প্যাকাটি বাবুগলো মুটকো।
৩য় ॥ ওরা কাগজের ফুল, ওরা চোখে চাঁদ দেখেনা

 

নজরুলের ছাদপেটানো গান

 

সমবেত ॥ ইটের ভিতরে কীটের মত কাটায় এরা রাত গো

—ছাদ পেটানোর ব্যাপারটা সাধারণত শহরকেন্দ্রিক এবং মেয়েরাই এই কাজে নিযুক্ত হত, গানটির মধ্যে মেয়েদের আলোচনা সমালোচনা বিশেষ জীবন্তভাবে পরিস্ফুট। এছাড়া তাদের প্রত্যেকের অভাব অভিযোগময় জীবনেও তারা প্রত্যেকে সমান দুঃখী।

 

google news logo

 

কেউই তার ছেলেদের ভাত দিয়ে আসতে পারেনি। কবির হাতে এরা তাদের মালিকের প্রতি বিরূপ মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে হয়ে উঠেছে বাস্তবের জীবন্ত চরিত্র। লোকসঙ্গীতকে হাতিয়ার করে কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে নিয়ে গেছেন এক সচেতনতার জগতে।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment