কবি নজরুলের আবশ্যিক শিক্ষা: কাজী রফিজউল্লাহ এবং তাঁর স্ত্রী শাসসুন্নেসা সত্যই কবিকে স্নেহ করতেন। তাঁদের বাড়ি ছিল ময়মনসিংহ জেলায় কাজীর শিমলা গ্রামে। তাঁদের প্রচেষ্টায় কবি ভর্তি হন সপ্তম শ্রেণীতে, ময়মনসিংহ জেলার দরিরামপুর হাই স্কুলে, ১৩২০ সাল মোতাবেক ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু এই নতুন পরিবেশেও কবির অবস্থান মাত্র কয়েক মাসের। ১৯১৪-এর ডিসেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে সে স্থান ত্যাগ করেন।
কবি নজরুলের আবশ্যিক শিক্ষা । নজরুলের ভাবনা
এরপর তিনি ভর্তি হন শিয়ারশোল রাজ হাই স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে। ১৯১৫ থেকে ১৯১৭ এই তিন বছর কবির স্থিতিশীল জীবনে, অষ্টম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি এ স্কুলে অধ্যায়ন করেন। পান সাত টাকা মাসিক বৃত্তি। আর পান শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়কে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে।
ফরাসি ভাষার প্রতি কবির আগ্রহের কথা আমরা পূর্বেই জেনেছি, এই স্কুলের ফরাসি শিক্ষক হাফিজ নূরুন্নবীর সাহচর্যে এসে তাঁর সে আগ্রহ অনেকাংশে পূর্ণ হতে পেরেছিল। নজরুলের দ্বিতীয় ভাষা ছিল ফারসি। সেনাবাহিনীতে থাকা কালীন এক পাঞ্জাবী মৌলবীর কাছে নজরুল যে কবি হাফিজের কবিতা পাঠ করতে পেরেছিলেন তার ভিত্তিভূমি প্রস্তুতিতে হাফিজ নুরুন্নবীর অবদান অবশ্যই স্বীকার্য।
সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ কবির মধ্যে আমরা প্রথমাবধি লক্ষ করেছি, এই স্কুলের সহকারী শিক্ষক সতীশচন্দ্র কাঞ্জিলালের সান্নিধ্যে এসে তাঁর সে স্পৃহা আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। নজরুলের সঙ্গীত-প্রীতি লক্ষ করে সতীশ বাবু তাঁকে নিজ বাড়িতে নিয়ে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের পাঠ দেন। সম্ভবত এখানেই কবির উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রথম অনুশীলন শুরু হয়।
প্রথম বিশ্ব মহাসমরের তৃতীয় বছর, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ, নজরুল তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র। প্রি-টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এমন সময় নজরুল লক্ষ করলেন শহরের দেওয়ালে আঁটা বড় বড় পোস্টারে বাঙালি যুবকদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের আহ্বান জানানো হয়েছে।

অস্থির চিত্ত নজরুল। পরীক্ষা ফেলে সেনাদলে নাম লিখে চলে গেলেন লাহোর হয়ে পেশোয়ারের কাছে নৌশোরাতে। এখানে তিন মাসের ট্রেনিং-এর পর তাঁকে যেতে হয় ৪৯নং বাঙালি পল্টনের হেড কোয়ার্টার করাচীতে। আপন কর্মদক্ষতার বলে অতি অল্পকালের মধ্যে ‘ব্যাটালিয়ান কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার’ পদে উন্নীত হন।
আরও দেখুনঃ