মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলসঙ্গীত চর্চাঃ নজরুলসঙ্গীত বাংলা গানের একটি মূল্যবান অধ্যায়। সে প্রেক্ষাপটে নজরুল রচনার বিভিন্ন দিক মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নজরুলসঙ্গীত চর্চার ক্ষেত্রটা এ পর্যায়ের সীমাবদ্ধ থাকলেও ব্যাপ্তি অনেক।
মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলসঙ্গীত চর্চা । নজরুলের ভাবনা
আমরা নজরুলসঙ্গীত চর্চার ক্ষেত্রে মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান আলোচনা করব।
নজরুল সাহিত্য পরিক্রমা
নজরুল সাহিত্যের অধিভুক্তিতে তার রচনার সকল বিষয় বিদ্যমান কাব্য, গল্প, প্রবন্ধ প্রভৃতির অবস্থান সঙ্গীতের চেয়ে নগন্য বটে। সাহিত্য পরিক্রমার অবস্থানে মূলত কাব্য, প্রবন্ধ, গল্প বেশ প্রবাহমান, এ পর্যায়ে নজরুলসঙ্গীত চর্চার অবস্থানকে সুদৃঢ় করার পাশাপাশি সাহিত্য পরিক্রমাও বিবর্তিত।
সঙ্গীত ও নজরুল
সঙ্গীত নজরুলের জীবনের এক বিরাট অধ্যায়। গান রচনা ও সুর করবার ক্ষেত্রে নজরুল প্রতিভা খুবই বিরল। পর্যায়ভিত্তিক গান ও পর্যায় ক্রমিক সুর সংযোজনে কাজী নজরুলের অবদান বাংলা গান তথা বাংলা গানের ইতিহাসে এক অবিস্মরনীয় দিক। মূল্যায়নের বা মূল্যবোধের দৃষ্টিতে সার্বিকভাবে নজরুলের সুর এবং গীত রচনা পরিমার্জিত রূপ বহন করে আছে। তিনি তাঁর রচনা সম্পর্কে বলে গিয়েছেন যে, “বাংলা সাহিত্যে কাব্য, গল্প, প্রবন্ধে আমি কি দিতে পেরেছি আমি জানি না, কিন্তু গানের বিবর্তনের ক্ষেত্রে আমার গানে আমি এমন কিছু দিয়ে যেতে পেরেছি যার জন্য মানুষ আমাকে একদিন মনে রাখবে”।
কবি হিসেবে নজরুলের আত্মপ্রকাশ :
১৩২৮ সালে “মোসলেম ভারত”, পত্রিকার মাধ্যমে প্রথমে কাজী নজরুল ইসলাম কবি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বিদ্রোহী ও কামাল পাশা নামে কার্তিক সংখ্যায় তা প্রকাশিত হয়েছিল।
নজরুলের কাব্য ও সঙ্গীত রচনার প্রেক্ষাপট : এই সুন্দর পৃথিবীতে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে গেছেন তাদের মধ্যে কাব্য ও সঙ্গীতে যার সার্থক নাম তাঁদের একজন কাজী নজরুল ইসলাম। জন্মলগ্ন থেকেই পরাধীন ভারতবর্ষের কার্যক্রম তৎকালীণ সময়ের সামাজিক ও সাঙ্গিতিক অবস্থান ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত নজরুরকে প্রভাবিত করেছিল। প্রতিভাবান নজরুল তখনকার সাহিত্য ও সঙ্গীতকে সুন্দরভাবে ধারণ করেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি রচনা করেছেন বিশাল কাব্য ও সঙ্গীত সম্ভার ।
মহাবিদ্যালয়ের আবশ্যিক শিক্ষা ও সঙ্গীত:
মহাবিদ্যালয়ের আবশ্যিক শিক্ষার পাশাপাশি সঙ্গীত শিক্ষাও প্রচলিত রয়েছে।
মহাবিদ্যালয়ের সঙ্গীত শিক্ষার দুটি ধারা রয়েছে।
(ক) উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ঃ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়কে আই মিউজ বলা হয়। যদি শুধুমাত্র একটি বিষয় সঙ্গীত হয় তবে সেটি হবে আই এ। আবার সঙ্গীতের দুটি বিষয় যদি নেওয়া হয় তখন সেটা হবে আই. মিউজ।
(খ) স্নাতক পর্যায়ে নজরুলসঙ্গীতঃ স্নাতক পর্যায়ে সঙ্গীত শিক্ষাকে বি.মিউজ T বলা হয়। এ পাঠ্যক্রমে দুটি বিষয় অবশ্যই পড়তে হয়। যেখানে নজরুলসঙ্গীত ৩০০ নম্বর।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সঙ্গীত :
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নজরুলসঙ্গীত দুটি পর্যায়ে বিভক্ত-
(ক) পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পরিচালিত প্রোগ্রামঃ
এ পর্যায়ে চার বছরের সম্মান এবং এক বছর স্নাতকোত্তর। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষ হিসেবে পড়ানো হয়।
(খ) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সম্মান পার্যয়ে ৪ বছর এবং মাস্টার্সে এক বছর পড়তে হয়। কিন্তু এ পর্যায় সেমিস্টার পদ্ধতিতে পড়ানো হয়। প্রতি সেমিস্টার ৪ এবং ৬ মাস ধরা হয়। ২ বছর ফাউন্ডেশন (সম্মিলিত কোর্স, নজরুল, রবীন্দ্র ও শাস্ত্রীয়) এবং ২ বৎসর নজরুলসঙ্গীত ‘স্নাতকোত্তর ১ বৎসর (নজরুলসঙ্গীত)।
এম. ফিল প্রোগামে নজরুলসঙ্গীত :
স্নাতকোত্তর কোর্সের পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নজরুলসঙ্গীত এম. ফিল প্রোগ্রামের অধিভুক্তি লাভ করেছে। তথ্যভিত্তিক প্রমাণে দেখা যায় যে, নজরুলের দেশাত্মবোধক গান, খেয়াল, গান, নজরুল সৃষ্ট রাগ প্রভৃতি বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে। ভারতবর্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও নজরুলসঙ্গীত সম্পর্কে গবেষণা বিদ্যমান। আজকের নজরুলসঙ্গীত গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় আগামী দিনে আরো ব্যাপকতা লাভ করবে তেমনটিই আমরা আশা করি।
পি, এইচ, ডি প্রোগ্রামে নজরুলসঙ্গীতের অবস্থান :
এম. ফিল প্রোগ্রামের পরই পি. এইচ. ডি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রচলিত। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার আলোকে সরাসরি পি.এইচ. ডি প্রোগ্রামে গবেষণার সুযোগ দেয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুলসঙ্গীতে পি. এইচ. ডি প্রোগ্রামের কার্যক্রম চালু রয়েছে যা ভারতবর্ষে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগে থেকেই প্রচলিত। নজরুলসঙ্গীত বিষয়ে পি, এইচ, ডি, প্রোগ্রামে গবেষণা হলে নজরুলসঙ্গীত আরো সমৃদ্ধি এবং বিন্যাস লাভ করবে যা বিকশিত করবে নজরুলসঙ্গীতের ভাণ্ডারকে।
নজরুলের সার্বিক মূল্যায়ণ
যাদের অবদানে বাংলা গান ধন্য, সমৃদ্ধ তাদের অন্যতম বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবি হিসেবে খ্যাতি লাভ করলেও বাংলা গানের এমন কোনো দিক নেই যা তিনি স্পর্শ করেননি। গল্প, প্রবন্ধ কবিতা ও সঙ্গীতে তিনি রেখেছেন বিশেষ কৃতিত্বের স্বাক্ষর। সার্বিক দিক থেকে মূল্যায়ন করলে নজরুল একজন সার্থক গীতিকার, সুরকার, সম্পাদক এবং শিল্পী।
আরও দেখুনঃ