নজরুলের গানে লুপ্ত রাগের ব্যবহার: ‘হারামণি’ এবং ‘নবরাগ মালিকা’ এই দুই পর্যায়ে লুপ্ত, অর্থগুপ্ত এবং নতুন 2 সৃষ্ট রাগে নজরুল যে গানগুলি রচনা করেছেন সেগুলি সঙ্গীতজ্ঞ নজরুলের অসামান্য কৃতিত্ব বহন করছে। বাংলা সঙ্গীতে সুরের দীনতা কবিকে পীড়া দিয়েছিল, তাই তিনি সমৃদ্ধির দিকে বিশেষরূপে দৃষ্টি দিয়েছিলেন।
নজরুলের গানে লুপ্ত রাগের ব্যবহার । নজরুলের ভাবনা
আধুনিক গানে সুরে সমতার অভাবও কবিকে বেদনাহত করেছিল। তিনি লিখেছেন, “আধুনিক (মর্ডাণ) গানের সুরের মধ্যে আমি যে অভাবটি সবচেয়ে বেশি অনুভব করি তা হচ্ছে ‘সিমিট্রি’ (সামজস্য) বা ইউনিফরমিটি’র (সমতা) অভাব। কোনো রাগ বা রাগিণীর সঙ্গে অন্য কোনো রাগ বা রাগিণীর মিশ্রণ ঘটাতে হলে সঙ্গীতশাস্ত্রের যে সুক্ষ্ম জ্ঞান বা রসবোধের প্রয়োজন তার অভাব আজকালকার অধিকাংশ গানের সুরের মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে এবং ঠিক কারণেই আমার নূতন রাগ-রাগিণীর সৃষ্টির এবং অপ্রচলিত রাগ-রাগিণী উদ্ধারের প্রচেষ্টা।”
একেবারে লুপ্ত হয়ে যাওয়া বা লুপ্তপ্রায় রাগ-রাগিণীগুলি উদ্ধার করে কবি সেই সুরে ‘হারামণি’ পর্যায়ের গানগুলি রচনা করেন। ‘হারামণি’ নামকরণটি ইঙ্গিতবহ হয়েছে সন্দেহ নেই। এ পর্যায়ের কয়েকটি গানের সুর ও প্রথম কলির উল্লেখ করছি।
বসন্ত মুখারী- বসন্ত মুখর আজি আনন্দী-দূর বোকুণ্ডে মুরলী মুহু মুহু শিবরঞ্জী- হে পার্থসারথি বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ, লঙ্কদহন সারং-আগ্নিগিরি ঘুমন্ত উঠিল জাগিয়া, পঠমঞ্জরী-আমি পথ মঞ্জরী ফুটেছি আঁধার রাতে, কর্ণটি সামন্ত কাবেরী নদী জলে কে গো বালিকা, নীলাম্বরী-নীলাম্বরী শাড়ী পরি নীল যমুনায়, নারায়ণী-নারায়ণী ঊষা খেলে হেসে, সিংহেন্দ্র মাধ্যমা পরদেশী মেঘ যাওরে ফিরে, বাঙাল বিলাবল ইত্যাদি।
অনন্ত গৌড়, মালগুঞ্জ, আহরী ভৈরব, আনন্দ ভৈরব, উমা তিলক, শৃঙ্গার বিরহামি-রক্তহংস সারং ইত্যাদি রাগ হারামণি পর্যায়ের।

স্বল্প পরিচিত খাড়া জাতীয় কাফি ঠাটের লক্ষ্মদহন সারং, খাম্বাজ ঠাটের গুড়ব- খাড়র জাতীয় নারায়ণী, কাফি ঠাসের পঠমঞ্জরী রাগগুলি বৈশিষ্ট্যের দাবী রাখে। হারামণি পর্যায়ে যে রাগগুলির কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার অনেকগুলিই দক্ষিণ ভারতীয় এবং এগুলি বাংলায় অপ্রচলিত। এদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রাগ হলো নীলম্বারী, সিংহেন্দ্ৰ মধ্যমা, কণটী সামন্ত, সাবন্ত সারং ইত্যাদি।
আরও দেখুনঃ