বাংলা সাহিত্যের প্রেম, দ্রোহ, মানবতা ও সাম্যের প্রতীক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম–এর জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় জুড়ে রয়েছে কুমিল্লা। ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ দফায় তিনি মোট প্রায় দশ থেকে এগারো মাস কুমিল্লায় অবস্থান করেছেন। এই সময়েই তাঁর জীবন ও সৃষ্টিকর্মে এসেছে প্রেম, বিরহ, নতুন অনুপ্রেরণা এবং উল্লেখযোগ্য সাহিত্যিক অবদান।
কুমিল্লায় কাজী নজরুল ইসলামের অবস্থান
কুমিল্লার সঙ্গে নজরুলের সম্পর্ক
গোমতী নদীর তীরে বিস্তৃত কুমিল্লা ছিল নজরুলের সৃষ্টিশীলতার এক উজ্জ্বল ঠিকানা। এখানে তাঁর জীবনে প্রবেশ করেন দুই প্রিয় নারী—
- সৈয়দা খানম (খাতুন) – যাকে কবি ডাকতেন নার্গিস আসার খানম নামে।
- শ্রীমতী আশালতা সেনগুপ্ত – ডাকনাম দোলন বা দুলী, পরে নজরুল নাম দেন প্রমীলা।
নার্গিস ও প্রমীলাকে ঘিরেই কুমিল্লা ও মুরাদনগরের দৌলতপুরে তাঁর বহু স্মরণীয় প্রেম ও বিরহের মুহূর্ত কাটে।
নজরুল প্রায়ই কুমিল্লার বিভিন্ন বাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতেন—
- আড্ডা দিতেন সাহিত্যপ্রেমীদের সঙ্গে
- গান ও কবিতা আবৃত্তি করতেন
- সঙ্গীতচর্চা ও নতুন গান রচনা করতেন

কুমিল্লায় নজরুলের পাঁচ দফা আগমন ও অবস্থানকাল
ক্রম | সময়কাল | ঘটনা ও বিবরণ |
প্রথমবার | মার্চ–এপ্রিল ১৯২১ থেকে ৮ জুলাই ১৯২১ | প্রায় ৩ মাস অবস্থান। কুমিল্লায় আগমনের শুরুতে সাহিত্য ও সঙ্গীতচর্চায় ব্যস্ত সময় কাটান। |
দ্বিতীয়বার | নভেম্বর ১৯২১ – ডিসেম্বর ১৯২১ | প্রায় এক মাসেরও কম সময় ছিলেন। |
তৃতীয়বার | ফেব্রুয়ারি ১৯২২ – জুন ১৯২২ | প্রায় ৪ মাস অবস্থান। এই সময়ে বহু গান ও কবিতা রচনা করেন। |
চতুর্থবার | অক্টোবর ১৯২২ – ২৩ নভেম্বর ১৯২২ | গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এড়ানোর জন্য কুমিল্লায় আসেন। |
পঞ্চমবার | ১৫ ডিসেম্বর ১৯২৩ – (তারিখ অজ্ঞাত) | জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সরাসরি কুমিল্লায় আসেন। সুনির্দিষ্ট প্রস্থান তারিখ জানা যায়নি। |
সাহিত্যিক গুরুত্ব
- কুমিল্লায় থাকাকালীন সময়ে নজরুলের বহু কবিতা ও গান সৃষ্টি হয়, যা তাঁর প্রেম ও মানবিকতার কবি পরিচয়কে আরও গভীর করে তোলে।
- নার্গিস ও প্রমীলা তাঁর কবিতার অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেন, যা পরবর্তীতে সাহিত্যকর্মে স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে।
- কুমিল্লার সাহিত্যিক পরিমণ্ডল তাঁর সৃষ্টিশীলতা ও সামাজিক যোগাযোগকে সমৃদ্ধ করেছে।
ঐতিহাসিক প্রাসঙ্গিকতা
নজরুলের কুমিল্লা অধ্যায় কেবল ব্যক্তিগত স্মৃতি নয়, বরং সাহিত্য-ইতিহাসের অংশ। এখানেই তিনি প্রেম, দ্রোহ, সঙ্গীত ও কবিতাকে একসঙ্গে ধারণ করেছেন, যা তাঁর বহুমুখী প্রতিভার পূর্ণ বিকাশে সহায়ক হয়েছে।