কাজী নজরুলের লোকসঙ্গীত: নজরুলগীতির বিষয় ও সুরগত বৈচিত্র্য বর্ণনা করতে গিয়ে নজরুল-বিশেষজ্ঞ আবদুল আজীজ আল্-আমান লিখেছেন, “…গানগুলি এক গোত্রের নয়, বিভিন্ন শ্রেণীর।
তিনি একাধারে রচনা করেছেন গজল গান, কাব্য সংগীত বা প্রেমগীতি, ঋতু-সংগীত, খেয়াল, রাগপ্রধান, হাসির গান, কোরাস গান, দেশাত্মবোধক গান, গণসংগীত–শ্রমিক-কৃষকের গান, ধীবরের গান, ছাদপেটার গান, তরুণ বা ছাত্রদলের গান, মার্চ-সংগীত বা কুচকাওয়াজের গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, নারী জাগরণের গান, মুসলিম জাতির জাগরণের গান, শ্যামাসংগীত, কীর্তন, বৈষ্ণবপদাবলী, অন্যান্য ভক্তিগীতি, ইসলামী সংগীত, শিশু সংগীত, নৃত্য-সংগীত, লোকগীতি – ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, সাম্পানের গান, ঝুমুর, সাঁওতালী, লাউনী, কাজরী, বাউল, মুর্শেদী এবং আরও নানা বর্ণের গান।
কাজী নজরুলের লোকসঙ্গীত । নজরুলের ভাবনা
লোক সঙ্গীত বাংলাদেশের সঙ্গীতের একটি অন্যতম ধারা। এটি মূলত বাংলার নিজস্ব সঙ্গীত। গ্রাম বাংলার মানুষের জীবনের কথা, সুখ দুঃখের কথা ফুটে ওঠে এই সঙ্গীতে। এর আবার অনেক ভাগ রয়েছে। এটি একটি দেশের বা দেশের যেকোনো অঞ্চলের সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। যেমন ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, পল্লীগীতি, গম্ভীরা ইত্যাদি।
উত্তর লোকসঙ্গীতকে জনপ্রিয় করার মূলে নজরুলের অবদান কোনোক্রমেই অস্বীকার করা যায় না। এ বিষয়ে বোধহয় সর্বপ্রথম উদযোগী হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, আর গীতরচনা ও সুরযোজন করে ব্যাপকভাবে বাংলার আকাশে-বাতাসে সেগুলিকে ছড়িয়ে দেবার দায়িত্ব নিয়েছিলেন নজরুল। আমরা দেখেছি নজরুলের মধ্যে দু’টি সঙ্গীত-সুরধারা এসে মিলিত হয়েছে-একটি ক্লাসিকাল বা রাগ-সঙ্গীতের ধারা, অন্যটি লোকসঙ্গীতের ধারা।

নজরুলসঙ্গীতে রাগ-সঙ্গীতের ধারা সম্পর্কে আমরা সাধারণভাবে অবগত। বাংলা লোকসঙ্গীতের ধারার সঙ্গে উত্তর ভারতীয় লোকসঙ্গীতের ধারা দুটি সমানভাবে এসে মিশেছে নজরুল সঙ্গীতে। বাংলা লোকসঙ্গীতের মধ্যে ঝুমুর, সাঁওতালী, বাউল, রামপ্রসাদী, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, কীর্তন, ভজন, কাজরী ইত্যাদি এবং উত্তর ভারতীয় লোকসঙ্গীতের মধ্যে নাত, গীত, গজল, কাওয়ালী, হোরি, লাওনা, বিহারী প্রভৃতি সঙ্গীতের সুর তিনি সমানভাবে নিজের গানে ব্যবহার করেছেন।
আরও দেখুনঃ