কবি নজরুল ও লোটালদল : মুসলিম ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত পর্যায়ে কবিকে দেখতে পাই ‘লেটো’ নাচের সঙ্গে যুক্ত হতে। এই দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি হিন্দু সংস্কৃতি ও পৌরাণিক উপাখ্যানের সঙ্গে বিশেষ রূপে পরিচিত হন। লেটো দলের প্রয়োজনেই হিন্দু উপাখ্যান এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলী নিয়ে ছোট ছোট নাটিকা রচনা করতেন। এই সময়কার ‘দাতাকর্ণ’ ‘মেঘনাদ বধ’ ‘শকুনি বধ’, ‘কবি কালিদাস’, ‘রাজপুত্র’ ‘আকবার বাদশা’ প্রভৃতি পালাগান-প্রহসনে কবির এই মানস-প্রকৃতির প্রতিচ্ছবি সুন্দররূপে ধরা পড়েছে। কবি চিত্তে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির এই যৌথ মিলন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অত্যন্ত ঘৃত হয়েই দেখা দিয়েছে।
কবি নজরুল ও লোটালদল । নজরুলের ভাবনা
লেটো দলে যোগদান কবি চিত্তকে নানান ভাবরসে পুষ্ট করেছে। এর ফলশ্রুতি হিসেবে পরবর্তী জীবনে ভক্তি-গীতি রচনায় কবির অনায়াস সাফল্য লক্ষ করার মতো। পরবর্তীকালে ফরমায়েস মতো সঙ্গীত রচনায় কবি যে অসামান্য দক্ষতা অর্জ করেছিলেন তারও হাতেখড়ি হয়েছিল এখানো লেটো দলে থাকাকালীন তাকে নানান দলের ফরমায়েস মতো নানান প্রয়োজন-ভিত্তিক প্রহসন পালাগান লিখে দিতে হতো।
এ সময়ের অপরিণত রচনাগুলিতে ভক্তিভাব বিশেষরূপে লক্ষ্যণীয়। কোনো কোনোটিতে দেহতত্ত্ব ও মুর্শিদীভাবেরও প্রাধান্য রয়েছে। কিন্তু সদা চঞ্চল নজরুলের পক্ষে লেটো দলে দীর্ঘদিন অবস্থান করা সম্ভব হল না। প্রকৃতপক্ষে কোনো কিছুতে যুক্ত হয়ে একটানা দীর্ঘদিন কাজ করা নজরুল-মানসিকতার বিরুদ্ধে ছিল।
কি বাল্যো, কি কৈশোরে, কি যৌবনে কোনো সময় তিনি কোনো কিছুতে দীর্ঘ দিন অবস্থান করেননি। সকল সময় স্থান পরিবর্তন করেছেন, পরিবেশ পরিবর্তন করেছেন- এতে তাঁর ক্ষতিই হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে আমাদেরও। একটি অসামান্য প্রতিভা, তার লালন হলো না, ঘুরে-ফিরে অধিকাংশ অপচয়েরর মধ্যে শেষই হয়ে গেল।

অতি সাধারণ অবস্থায় লেটো দলে যোগদান করেছিলেন নজরুল। নিজ প্রতিভা বলে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তিনি দলের শ্রেষ্ঠতম পনটি অধিকার করে নিলেন- হলেন ‘ওস্তাদ’। এবং তার পরেই হয়তো লেটো দলের প্রতি তাঁর সব আকর্ষণ শেষ হয়ে গেল। তিনি দল ত্যাগ করলেন। হলেন মাথরুণ হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। শিক্ষক কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিক। সময় ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ বয়স এগার।
আরও দেখুনঃ