কাজী নজরুলের শেষ জীবনের ১টি কবিতার অংশবিশেষ: ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের জন্ম দেন। এই দুটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ও ভাঙ্গার গান সঙ্গীত। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
কাজী নজরুলের শেষ জীবনের ১টি কবিতার অংশবিশেষ । নজরুলের ভাবনা
“আর জিজ্ঞাসা করিব না কোন কথা
আর জিজ্ঞাসা করিব না কোন কথা,
আপনার মনে ক’য়ে যাব আমি আপন মনের ব্যথা।
ভোরের প্রথম ফোটা ফুলগুলি গোপনে তুলিয়া আনি
অঞ্জলি নিতে তোমার দুয়ারে দাঁড়াই যুক্ত পাখি।
আমার চেয়েও সকরুণ চোখে ফুলগুলি চেয়ে থাকে,
মোর সাথে ওরা তব পায়ে চাহে অর্পিতে আপনাকে।
তব তনু হেরি’ ফুলগুলি যেন অধিক ফুল্ল হয়,
মনেভাবে, ঐ অঙ্গের সাথে কবে হবে পরিচয়।
তুমি দ্বিধাভরে যেন ভয়ে ভয়ে যাও উহাদের কাছে,
ভাব বুঝি, ঐ ফুলের ঝাঁপিতে লোভের সাপিনী আছে।
মুখ ফুটে তাই বলিতে পার না, “ঐ ফুলগুলি দাও।”
আমার হাতের ফুলগুলি বোঝা, উহাদের ভয় পাও ।
চেয়ে দেখি হায়, বেদনায় মোর যুগ্ম ফুলের গুছি
সূর্যের নামে শপথ করিয়া কাঁদে, “শুচি মোরা শুটি।”
ছড়াইয়া দিই পটের ধূলাতে প্রেম-ফুল-অঞ্জলি,
“দেখ সাপ নাই, নাই কাঁটা” আমি ফিরে যেতে যেতে বলি।
অবুঝ ভিখারী মন যেতে যেতে পিছু ফিরে’ ফিরে চায়,
ছড়ানো একটি ফুল তুলে’ সে কি লুকালো-এলো-খোঁপায়।
দূর হতে দেখে, পাষাণ-মূরতি তেমন দাঁড়ায়ে আছে;
ফুল এড়াইয়া চলে গেলে তুমি, কলঙ্ক লাগে পাছে।
তোমার চলার পথে পড়ে যত এই পৃথিবীর ধূলি,
তারও চেয়ে কি গো, মলিনতা-মাখা আমার কুসুমগুলি?
ধূলায় তোমায় ভুলায় না পথ, পথ ভুলাবে কি ফুল।
ভায় পাও কিগো যদি শোনো পথে গাহে বন-বুলবুল ?
তুমি শুনিলে না, তবু মোর কথা থামিতে চাহে না কেন,
তোমার ফুলের ফাল্গুন মাসে আমি ঝোড়ে মেঘ যেন!
তব ফুল-ভরা উৎসবে কেন জল ছিটিয়ে সে যায়,
তব সাথে তার কোন সে জীবনে কোন যোগ ছিল, হায়।
ভয় করিও না, মেঘ আসে- মেঘ শেষ হয়ে যায় গলে’,
আমার না-বলা কথা বলা হলে আমিও যাইব চলে’।
আমি জানি, এই ফাগুন ফুরাবে, খর বৈশাখ এসো
কি যেন দারুণ আগুণ জ্বালাবে তোমাদের এই দেশে।
আরও দেখুনঃ