শাত-ইল-আরব কবিতাটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত। অগ্নিবীণা ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, যা ১৩২৯ বঙ্গাব্দের কার্তিক মাসে (অক্টোবর, ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে) প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী সৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত, যা নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা, সাম্যবাদী মনোভাব এবং মানবতার আহ্বানকে তুলে ধরে। অগ্নিবীণায় মোট বারোটি কবিতা সংকলিত হয়েছে—যেমন: ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী’, ‘রক্তাম্বর-ধারিণী মা’, ‘আগমণী’, ‘ধূমকেতু’, ‘কামাল পাশা’, ‘আনোয়ার’, ‘রণভেরী’, ‘শাত-ইল-আরব’, ‘খেয়াপারের তরণী’, ‘কোরবানী’ ও ‘মোহররম’। এই গ্রন্থের শুরুতেই বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে উৎসর্গ করে লেখা একটি উৎসর্গ কবিতা সংযোজিত হয়েছে। ‘শাত-ইল-আরব’ কবিতার মাধ্যমে নজরুল ইসলামী ইতিহাস, বিপ্লব, সংগ্রাম ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শক্তিশালী বার্তা তুলে ধরেছেন, যা তাঁকে বাংলার জাতীয় কবির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করতে সহায়ক হয়েছে।
শাত-ইল-আরব কবিতা
শাতিল্ আরব! শাতিল্ আরব!! পূত যুগে যুগে তোমার তীর।
শহীদের লোহু, দিলিরের খুন ঢেলেছে যেখানে আরব-বীর।
যুঝেছে এখানে তুর্কি-সেনানী,
য়ুনানি, মিস্রি, আর্বি, কেনানি–
লুটেছে এখানে মুক্ত আজাদ্ বেদুঈন্দের চাঙ্গা শির!
নাঙ্গা-শির্–
শম্শের হাতে, আঁসু-আঁখে হেথা মূর্তি দেখেছি বীর-নারীর!
শাতিল্ আরব! শাতিল্ আরব!! পূত যুগে যুগে তোমার তীর।
‘কুত-আমারা’র রক্তে ভরিয়া
দজ্লা এনেছে লোহুর দরিয়া;
উগারি সে খুন তোমাতে দজ্লা নাচে ভৈরব ‘মস্তানি’র।
এস্তা-নীর
গর্জে রক্ত-গঙ্গা ফোরাত, –’শাস্তি দিয়েছি গোস্তাখির!’
দজ্লা-ফোরাত-বাহিনী শাতিল! পূত যুগে যুগে তোমার তীর।
বহায়ে তোমার লোহিত বন্যা
ইরাক আজমে করেছ ধন্যা;–
বীর-প্রসূ দেশ হলো বরেণ্যা মরিয়া মরণ মর্দমির!
মর্দ বীর
সাহারায় এরা ধুঁকে মরে তবু পরে না শিকল পদ্ধতির।
শাতিল্-আরব! শাতিল্-আরব্! পূত যুগে যুগে তোমার তীর!
দুশ্মন্-লোহু ঈর্ষায়-নীল
তব তরঙ্গে করে ঝিলমিল্,
বাঁকে বাঁকে রোষে মোচড় খেয়েছ পিয়ে নীল খুন পিণ্ডারির!
জিন্দা বীর
‘জুলফিকার’ আর ‘হায়দরি’ হাঁক হেথা আজো হজরত্ আলীর-
শাতিল্-আরব!-শাতিল্-আরব!! জিন্দা রেখেছে তোমার তীর।
ললাটে তোমার ভাস্বর টীকা
বস্রা-গুলের বহ্নিতে লিখা–
এ যে বসোরার খুন-খারাবি গো রক্ত-গোলাব-মঞ্জরীর!
খঞ্জরীর
খঞ্জরে ঝরে খর্জুর সম হেথা লাখো দেশ-ভক্ত-শির!
শাতিল্-আরব! শাতিল্-আরব!! পূত যুগে তোমার তীর।
ইরাক-বাহিনী! এ যে গো কাহিনী,–
কে জানিত কবে বঙ্গ-বাহিনী
তোমারও দুঃখে ‘জননী আমার!’ বলিয়া ফেলিবে তপ্ত নীর!
রক্ত-ক্ষীর–
পরাধীনা! একই ব্যথায় ব্যথিত ঢালিল দু-ফোঁটা ভক্ত-বীর।
শহীদের দেশ! বিদায়! বিদায়!! এ অভাগা আজ নোয়ায় শির!
—————————–
শাতিল আরব– আরব দেশের একটি নদীর নাম।
দিলির– অসম সাহসী
য়ুয়ানি– য়ুনান দেশের অধিবাসী
মিস্রিা– মিশরের অধিবাসী
কেনানি– কেনানের অধিবাসী
চাঙ্গা– টাটকা
কুত-আমারা–
কুতল-আমার নামক স্থান, যেখানে জেনারেল টাউনসেন্ড বন্দী হন।
অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য কবিতা:
- প্রলয়োল্লাস
- বিদ্রোহী
- রক্তাম্বর-ধারিণী মা
- আগমণী
- ধূমকেতু
- কামাল পাশা
- আনোয়ার
- রণভেরী
- শাত-ইল-আরব
- খেয়াপারের তরণী
- কোরবানি
- মোহররম
আরও পড়ুন: