Site icon Amar Nazrul [ আমার নজরুল ] GOLN

বৈষ্ণব পদাবলী ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত

বৈষ্ণব পদাবলী ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত

বৈষ্ণব পদাবলী বাংলা গানের বিবর্তনে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়, সামগ্রিকভাবে বাংলার ধর্ম, সমাজসংস্কার এবং মননে বৈষ্ণব সাহিত্যের দান অপরিসীম। বৈষ্ণব প্রেমবাদের মাধ্যমে নরে-নারায়ণ ও জীবে ব্রহ্ম দর্শনের দীক্ষা পেল বাঙালী। এই প্রীতিধর্মের প্রভাবে বাঙালীর মানবতাবোধ হলো তীব্র, তীষ্ম ও উদ্দীপ্ত। ষোল শতক তাই বাঙালীর বাংলা সাহিত্যের রেনেসাঁর যুগ।

বৈষ্ণব পদাবলী ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত

 

বৈষ্ণব রচনাবলীর রচনার উন্মেষকাল পঞ্চদশ শতাব্দী, আর তার অজস্র ধারাবর্ষণ ষোড়শ শতাব্দীতে। পরবর্তী সপ্তদশ, অষ্টাদশ, উনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত এর ধারা বিলম্বিত। এগুলিরই অনুসারী রচনা আধুনিককালে রবীন্দ্রনাথের ভানুসিংহের পদাবলী। সে কারণে বাংলাগানের ইতিহাসে পদাবলী কীর্তনের বিকাশ অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য বিষয়। এই সঙ্গীতকালকে ভারতীয় সঙ্গীতের ইতিহাসে বাঙালীর সর্বশ্রেষ্ঠনান রূপে বর্ণনা করা হয়ে থাকে।

পদাবলী কীর্তনের ভেতর দিয়েই বাঙালীর প্রথম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আত্মপ্রকাশ ঘটে। চর্যাগীতি বা গীতগোবিন্দ, পদাবলী তৎকালীণ প্রবন্ধ গীতির অন্তর্গত ছিল। তাতে বাংলার নিজস্ব সাঙ্গীতিক বৈশিষ্ট্য থাকার কথা নয়। বড় চণ্ডীদাশ শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে কিছু কিছু একান্ত আঞ্চলিক প্রবন্ধ ব্যবহার করেছিলেন সত্য, কিন্তু সেসবের গায়নরূপ রক্ষা পায়নি, যার ফলে এর কোন ধারাবাহিকতা নেই। আর সেসবও কোন সমৃদ্ধগীতিরূপ বিশিষ্ট্য ছিল বলে মনে হয় না।

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

 

 

পদাবলী কীর্তনেই প্রথম একটি সাঙ্গীতিকরূপ প্রতিষ্ঠা পেল যা একান্তই বঙ্গীয় রবীঠাকুর যাকে বলেছেন হিন্দুস্থানী সঙ্গীতকে ঠেকিয়ে দেয়া। হিন্দুস্থানী সাঙ্গীতকলার ভিত্তিতেই বাঙালি কীর্তনসঙ্গীত রচয়িতাগণ একটি বঙ্গীয় সঙ্গীত ধারা সৃষ্টি করলেন। তাঁরা সুর আহরণের ভিত্তি হিসাবে রাগসমূহকেই গ্রহণ করলেন। কিন্তু সুর রচনার রীতি গেল সম্পূর্ণ বদলে। হিন্দুস্থানী সঙ্গীতে সুর রচনার রীতি হচ্ছে রাগের সাধারণ রূপপ্রকাশমূলক।

সেখানে হৃদয়াবেগ প্রকাশ রাগরূপ প্রকাশের অন্তর্গত। ফলে হিন্দুস্থানী সঙ্গীতের গোটা বিকাশই হয়েছে বিশুদ্ধ সঙ্গীতের আদর্শে। কিন্তু বৈষ্ণব পদাবলীতে রাগসুরও রূপায়িত হয়েছে হৃদয়াবেগ প্রকাশের পটভূমিতে। রাগসমূহের সাধারণ রূপপ্রকাশ সেখানে বড় হয়ে দেখা যায় নি।

সুরকলা কীর্তনে এসে কাব্যভাবমুখী হয়ে উঠেছে। বাণীর ব্যঞ্জনাকে পরিস্ফুট করে তোলা সেখানে সঙ্গীত যোজনার মুখ্য লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। সুতরাং কাব্য সঙ্গীতকলারূপে বাংলা গানের যথার্থ সূত্রপাত পদাবলী কীর্তনেই ।

 

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version