Site icon Amar Nazrul [ আমার নজরুল ] GOLN

নজরুলের মধ্যে বৈশ্বিক মানুষ

বৈশ্বিক মানুষ : রেনেসাঁস মানুষকে নিখিল বিশ্বের অধিবাসী করে দিয়েছিল। জাতি, ধর্ম, স্বদেশ পরিচয়ের সমস্ত গণ্ডি ভেঙে রেনেসাঁসের মানুষ হতে চেয়েছিল ‘ইউনিভার্সাল ম্যান’। প্রিন্স অব হিউম্যানিটিস’ আখ্যাত এরাজমুজ (১৪৬৯-১৫৩৬) সম্পর্কে বলা হয় ‘he belongedto no nation’ রামেমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ অনেকের মধ্যে ছিল সেই “বৈশ্বিক মানুষ’ হবার আকুতি।

 

 

নজরুলের মধ্যে বৈশ্বিক মানুষ

নজরুলের মধ্যে সেই বৈশ্বিকতার আহ্বান। মানসিকভাবে তিনি এমন একটি স্তরে, উত্তীর্ণ হতে চেয়েছেন,

যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা ব্যবধান
যেখানে মিশেছে হিন্দু বৌদ্ধ মুসিলিম খ্রিস্টান।

– (‘সাম্যবাদী’, ১৯২৫)

 

 

প্রাক রেনেসাঁস যুগে ইউরোপে মানুষ বলতে বোঝাতে একজন খ্রিস্টানকে। রেনেসাঁসের সৌজন্যে প্রতিষ্ঠিত হল ‘হিউম্যানিজম’-মানবতাবাদ। বাংলায় রামহোমন ছিলেন এর উদগাতা । নজরুলকেও ধরা যেতে হিউম্যানিজমে’র-প্রবক্তা হিসাবে। তাঁর সাহিত্যসাধনায় ফুটে উঠেছে সমস্ত রকম ধর্ম- পারে ‘সেকুলার পরিচয় বিনির্মুক্ত মানবতাবদী রূপটি। মধ্যযুগের ‘মিশ্রভাষারীতি’র কাব্যে যেখানে লেখা হত,

দেও পূজা ক্ষমা দেহ ঝুঁটি মালা ছাড়।
এক ভাবে নবীর কলেমা মুখে পড়ে।
আমার নবীর দীনে লেটা নাই।
সব ছাড়ি দাড়ি রাখ গুণ মেরা ভাই।
(আমীর হামজা, জৈগুণের পুঁথি)

 

আমাদেরকে গুগল নিউজে ফলো করুন

 

 

 

ধর্মান্তরণের এই মৌলবাদী আগ্রহ থেকে নজরুল শত যোজন দূরে। তিনি লিখেছেন,

“অবতার পয়গম্বর কেউ বলেন নি আমি হিন্দুর জন্য এসেছি, আমি খ্রিস্টানের জন্য এসেছি। তাঁরা বলেছেন আমি মানুষের জন্য এসেছি আলোর মত, সকলের জন্য।”

(‘হিন্দু-মুসলমান’, রুদ্রমঙ্গল)

প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম ও ধর্মস্থানের চেয়ে অনেক উঁচুতে স্থান দিয়েছেন মানুষের হৃদয়ধর্মকে। তাই লিখতে পেরেছেন।

হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।
মানবতাবদী কবির কাছে ঈশ্বর নয়, মানুষই তো শ্রেষ্ঠ।
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান
(‘মানুষ’ সাম্যবাদী)

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version