নদীপারের মেয়ে কবিতাটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর চক্রবাক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে । চক্রবাক কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত একটি কাব্যগ্রন্থ । ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে এই গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে মোট কবিতার সংখ্যা ১৯টি। এই কাব্যে নজরুল বেদনার ছবি তুুুলে ধরেছেন; এতে রয়েছে প্রেমের অনুুুভূতি এবং অতীত সুুখের স্মৃতিচারণা।
নদীপারের মেয়ে কবিতা
নদীপারের মেয়ে! ভাসাই আমার গানের কমল তোমার পানে চেয়ে। আলতা-রাঙা পা দুখানি ছুপিয়ে নদী-জলে ঘাটে বসে চেয়ে আছ আঁধার অস্তাচলে। নিরুদ্দেশে ভাসিয়ে-দেওয়া আমার কমলখানি ছোঁয় কি গিয়ে নিত্য সাঁঝে তোমার চরণ, রানি? নদীপারের মেয়ে! গানের গাঙে খুঁজি তোমায় সুরের তরি বেয়ে। খোঁপায় গুঁজে কনক-চাঁপা, গলায় টগর-মালা, হেনার গুছি হাতে বেড়াও নদীকূলে বালা। শুনতে কি পাও আমার তরির তোমায়-চাওয়া গীতি? ম্লান হয়ে কি যায় ও-চোখে চতুর্দশীর তিথি?
নদীপারের মেয়ে! আমার ব্যথার মালঞ্চে ফুল ফোটে তোমায়-চেয়ে। শীতল নীরে নেয়ে ভোরে ফুলের সাজি হাতে, রাঙা উষার রাঙা সতিন দাঁড়ায় আঙিনাতে। তোমার মদির শ্বাসে কি মোর গুলের সুবাস মেশে? আমার বনের কুসুম তুলি পর কি আর কেশে? নদীপারের মেয়ে! আমার কমল অভিমানের কাঁটায় আছে ছেয়ে! তোমার সখায় পূজ কি মোর গানের কমল তুলি? তুলতে সে-ফুল মৃণাল-কাঁটায় বেঁধে কি অঙ্গুলি? ফুলের বুকে দোলে কাঁটার অভিমানের মালা, আমার কাঁটার ঘায়ে বোঝ আমার বুকের জ্বালা?
কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সঙ্গীতকার। তার মাত্র ২৩ বৎসরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের জন্ম দেন। এই দুটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ও ভাঙ্গার গান সঙ্গীত। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একই সময় রচিত আরেকটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে কামাল পাশা- এতে ভারতীয় মুসলিমদের খিলাফত আন্দোলনের অসারতা সম্বন্ধে নজরুলে দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন আন্তর্জাতিক ইতিহাস-চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।
১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কবিতা-সংকলন অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতায় একটি নতুনত্ব সৃষ্টিতে সমর্থ হয়, এর মাধ্যমেই বাংলা কাব্যের জগতে পালাবদল ঘটে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরপর এর কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: “প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, শাত-ইল্-আরব, বিদ্রোহী, কামাল পাশা” ইত্যাদি। এগুলো বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তার শিশুতোষ কবিতা বাংলা কবিতায় এনেছে নান্দনিকতা খুকী ও কাঠবিড়ালি, লিচু-চোর, খাঁদু-দাদু ইত্যাদি তারই প্রমাণ।
চক্রবাক কাব্যগ্রন্থ এর অন্যান্য কবিতাঃ
- তোমারে পড়িছে মনে
- বাদল-রাতের পাখি
- স্তব্ধ রাতে
- বাতায়ন-পাশে গুবাক-তরুর সারি
- কর্ণফুলী
- শীতের সিন্ধু
- পথচারী
- মিলন-মোহনায়
- গানের আড়াল
- তুমি মরে ভুলিয়াছ
- হিংসাতুর
- বর্ষা-বিদায়
- সাজিয়াছি বর মৃত্যুর উৎসবে
- অপরাধ শুধু মনে থাক
- আড়াল
- নদীপারের মেয়ে
- ১৪০০ সাল
- চক্রবাক
- কুহেলিকা