অকূল তুফানে নাইয়া কর পার | Akul tufane naiya karo par | নজরুল সঙ্গীত। কাজী নজরুল ইসলাম

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার গনটির সুর করেছেন সুধীন দাশ। নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চদশ খণ্ড। প্রথম গান। গানটি ভক্তিমূলক।

বিষয়াঙ্গ: ভক্তি (সাধারণ, প্রার্থনা)
সুরাঙ্গ: রাগাশ্রয়ী
রাগ: ভৈরবী
তাল: তাল ফেরতা (দাদরা/ কাহারবা )
গ্রহস্বর: সা

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার । নজরুল সঙ্গীত। কাজী নজরুল ইসলাম

 

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার গানের কথা

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার
পাপ দরিয়াতে ডুবে মরি কান্ডারি
নাই কড়ি নাই তরী প্রভু পারে তরিবার।।
থির নহে চিত পাপ-ভীত সদা টলমল
পুণ্যহীন শূন্য মরু সম হৃদি-তল নাহি ফুল নাহি ফল
পার কর হে পার কর ডাকি কাঁদি অবিরল
নাহি সঙ্গী নাহি বন্ধু নাহি পথেরি সম্বল।
সাহারায় নাহি জল
শাওন বরিষা সম তব করুণার ধারা
ঝরিয়া পড়ুক পরানে আমার।।

AmarNazrul.Com Logo 252x68 px White অকূল তুফানে নাইয়া কর পার | Akul tufane naiya karo par | নজরুল সঙ্গীত। কাজী নজরুল ইসলাম

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার গানের ভাবসন্ধান:

জগৎ-সংসার পাপরূপী সমুদ্র আজ ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ। সেই অকূল তুফান-সাগর পার হওয়ার মতো কবির কাছে তরীরূপী কোনো অবলম্বন নেই, নেই পার হওয়ার মতো নেই পুণ্যের কড়ি। তাই কবি সেই অস্থির দুঃসহ এবং উপায়হীন দশায় একমাত্র পরম স্রষ্টার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। কবির মন অতিবাহিত জীবনের পাপের পরিনামের ভয়ে সর্বদা অস্থির। তিনি ফেলে আসা জীবন-পথে দেখেন পুণ্যহীন মরুপ্রান্তর। সেখানে কোনো পুণ্য-ফুল ফোটে নি, কোনো কল্যাণের ফল ধরে নি। তাঁর চলার পথে তিনি সঙ্গহীন সঙ্গীহীন। তাই কবি স্রষ্টার করুণা পাওয়ার আশায় উদ্বেলিত হয়েছেন। কবির জীবনক্ষেত্র যেন জলহীন, রুক্ষ সাহারা মরুভূমি। কবি স্রষ্টার কাছে প্রারথনা করেন, যে সে জীবন-সাহারায় স্রষ্টার অপার করুণা শ্রাবণের জলধারায় সিক্ত হয়ে উঠুক।

AmarNazrul.Com Logo 252x68 px Dark অকূল তুফানে নাইয়া কর পার | Akul tufane naiya karo par | নজরুল সঙ্গীত। কাজী নজরুল ইসলাম

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার গানের রচনাকাল ও স্থান:

গানটির সুনির্দিষ্ট রচনাকাল পাওয়া যায় না। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৪১) মাসে, এইচএমভি রেকর্ড কোম্পানি প্রথম এই গানটির রেকর্ড প্রকাশ করে। এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ১ মাস।

ব্রহ্মমোহন ঠাকুর তাঁর ‌’নজরুল সঙ্গীত নির্দেশিকা গ্রন্থে লিখেছেন-
রেকর্ড বুলেটিনের মন্তব্য-গায়ক এই গান দুইখানির রচনা, সুর সংযোজনা এমনভাবে করিয়াছেন যাহাতে হিন্দু, মুসলমান সকলেরই আনন্দদায়ক হয়” গান দুইখানি অর্থে আলাচ্য গানটি ও রেকর্ডের অপর পিঠের গান – ‘এসেছি তব দ্বারে’।

AmarNazrul.Com Logo 252x68 px White অকূল তুফানে নাইয়া কর পার | Akul tufane naiya karo par | নজরুল সঙ্গীত। কাজী নজরুল ইসলাম

 

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার গানের রেকর্ড সূত্র:

এইচএমভি। জুন ১৯৩৪। এন ৭২৪৪। শিল্পী: গণি মিঞা (ধীরেন দাস)। সুরকার: ধীরেন দাস। উল্লেখ্য, গানটি শিল্পী গণি মিঞা ছদ্ম নামে রেকর্ড করেছিলেন।

স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার: সুধীন দাশ। নজরুল-সঙ্গীত স্বরলিপি, পঞ্চদশ খণ্ড। ভাদ্র ১৪০৩। আগষ্ট ১৯৯৬। প্রথম গান। রেকর্ডে গণি মিঞা (ধীরেন দাস)-এর গাওয়া গানের সুরানুসারে স্বরলিপি করা হয়েছে।

AmarNazrul.Com Logo 252x68 px Dark অকূল তুফানে নাইয়া কর পার | Akul tufane naiya karo par | নজরুল সঙ্গীত। কাজী নজরুল ইসলাম

 

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার গানের স্বরলিপি:

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার গানের স্বরলিপি পিডিএফ

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার গানের স্বরলিপির ছবি:

 

অকূল তুফানে নাইয়া কর পার গানের স্বরলিপি scaled অকূল তুফানে নাইয়া কর পার | Akul tufane naiya karo par | নজরুল সঙ্গীত। কাজী নজরুল ইসলাম

 

AmarNazrul.Com Logo 252x68 px Dark অকূল তুফানে নাইয়া কর পার | Akul tufane naiya karo par | নজরুল সঙ্গীত। কাজী নজরুল ইসলাম

 

নজরুলগীতি বা নজরুল সঙ্গীত:

নজরুলগীতি বা নজরুল সঙ্গীত বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান কবি ও সংগীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলাম লিখিত গান। তার সীমিত কর্মজীবনে তিনি ৩০০০-এরও বেশি গান রচনা করেছেন। এসকল গানের বড় একটি অংশ তারই সুরারোপিত। তার রচিত চল্‌ চল্‌ চল্‌, ঊর্ধ্বগগণে বাজে মাদল বাংলাদেশের রণসংগীত। তার কিছু গান জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়েছিল যার মধ্যে রয়েছে গানের মালা, গুল বাগিচা, গীতি শতদল, বুলবুল ইত্যাদি। পরবর্তীকালে আরো গান সংগ্রন্থিত হয়েছে। তবে তিনি প্রায়শ তাৎক্ষণিকভাবে লিখতেন; একারণে অনুমান করা হয় প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের অভাবে বহু গান হারিয়ে গেছে। তার কিছু কালজয়ী গানগুলো হলো ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’, ‘চল চল চল’, ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ’ ইত্যাদি।

সাধের ভিখারিণী কবিতা । দোলনচাঁপা কাব্যগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম | ১৯২৩
কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi nazrul islam ]

কাজী নজরুল ইসলাম:

কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সঙ্গীতকার। তার মাত্র ২৩ বৎসরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। তার জীবন শুরু হয়েছিল অকিঞ্চিতকর পরিবেশে। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে। একই সঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজন্যদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দী করেছিল। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন অবিভক্ত ভারতের বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।

বিংশ শতাব্দীর বাঙালির মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে তাকে “জাতীয় কবি“ হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তার কবিতা ও গানের জনপ্রিয়তা বাংলাভাষী পাঠকের মধ্যে তুঙ্গস্পর্শী। তার মানবিকতা, ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে দ্রোহ, ধর্মীয়গোঁড়ামির বিরুদ্ধতা বোধ এবং নারী-পুরুষের সমতার বন্দনা গত প্রায় একশত বছর যাবৎ বাঙালির মানসপীঠ গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে।

আরও পড়ুন:

Leave a Comment