রাজা-প্রজা কবিতা । সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম

রাজা-প্রজা কবিতাটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে।  সাম্যবাদী বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ । বইটি ১৯২৫ সালের ডিসেম্বরে বাংলার পৌষ,১৩৩২ সালে  প্রকাশিত হয়।  কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলোয় বেশিরভাগই মানবিক বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। কাজী নজরুলের একটি অসাধারণ ও মানবতাবাদী কাব্যগ্রন্থ হলাে সাম্যবাদী’। এ কাব্যগ্রন্থে মােট ১০টি কবিতা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য কবিতা হলাে- সাম্যবাদী, মানুষ, নারী, পাপ, কুলি-মজুর।

রাজা-প্রজা কবিতা । সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi nazrul islam ]

রাজা-প্রজা কবিতা

 

 

সাম্যের গান গাই

যেখানে আসিয়া সম-বেদনায় সকলে হয়েছি ভাই।

 ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ এ প্রশ্ন অতি সোজা,

এক ধরণির সন্তান,​​ কেন কেউ রাজা,​​ কেউ প্রজা?

 ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ অদ্ভুত দর্শন –

এই সোজা কথা বলি যদি ভাই,​​ হবে তাহা সিডিশন!

প্রজা হয় শুধু রাজ-বিদ্রোহী,​​ কিন্তু কাহারে কহি,

অন্যায় করে কেন হয় নাকো রাজাও প্রজাদ্রোহী!

প্রজারা সৃজন করেছে রাজায়,​​ রাজা তো সৃজেনি প্রজা,

কৃতজ্ঞ রাজা তাই কি প্রজায় ধরে করে দিল খোজা?

 ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ বন্ধু হাসিছ চুটে,

আপনার ঘরে হয়ে আছি সব গোলাম নফর মুটে!

আপনার পুরুষত্ব অন্যে সঁপিয়া কী পেনু দাম?

আগলাতে রাজা-রাজ্য-হারেম হয়েছি খোজা গোলাম!

 ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ এ ব্যথা কাহারে কই,

যার ঘর তার ঘর নয় আর নেপো মারে এসে দই!

যাদের লইয়া রাজ্য,​​ রাজ্যে নাই তাহাদেরই দাবি,

রাজা-দেবতার অনন্ত ভোগ,​​ আমরা খেতেছি খাবি!

এ নিয়ে নালিশ কার কাছে করি,​​ জয় রাজাজি কী জয়!

আমাদের হয় সুবিচার,​​ নাই রাজারই বিচারালয়!

গুরু গুরু বাজে যুদ্ধ-ডঙ্কা,​​ দলে দলে ছুটে ছেলে,

হেসে বুক চিরে কলসি কলসি তাজা খুন দিল ঢেলে।

কলিজা-ছিদ্রে দীর্ঘশ্বাস ফুঁ দিয়া বাজায় শাঁখ,

ঘরে ঘরে উঠে ক্রন্দন-উলু,​​ চালে চালে ওড়ে কাক;

 ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ প্রস্তুত হল পথ –

বাজা শাঁখ বাজা,​​ ওই দেখা জয়-লক্ষ্মীর রথ!

মাগো কাঁদ তোরা,​​ আদুরি বোনেরা ধূলায় লুটায়ে পড়,

সিঁথায় সিঁদুর নাই দিলি বধূ,​​ চল থেমে গেছে ঝড়।

 ​​​​

ফেরেনি ছেলেরা ফেরেনি ভাইরা?​​ ফেরোনিকো পতি?​​ ওরে,

দুঃখ কী?​​ ওরা স্থান পেয়েছে যে জয়-লক্ষ্মীর ক্রোড়ে!

 ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ আজিকে রাজ্যময়

শোকের তুফান ছাপাইয়া উঠে – জয় রাজাজি কী জয়!

 ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ বাজা রে ডঙ্কা বাজা –

এতদিন পরে কেল্লা ছাড়িয়া বাহির হয়েছে রাজা।

নিহত আহত বীরেরে মাড়ায়ে ছুটেছে রাজার রথ,

যুদ্ধ-ফেরত খঞ্জ পঙ্গু পালা পালা ছাড় পথ!

 ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ বন্ধু এমনই হয় –

জনগণ হল যুদ্ধে বিজয়ী,​​ রাজার গাহিল জয়।

প্রজারা জোগায় খোরাক-পোশাক,​​ কী বিচার বলিহারি,

প্রজার কর্মচারী নন,​​ তাঁরা রাজার কর্মচারী!

মোদেরই বেতন-ভোগী চাকরেরে সালাম করিব মোরা,

ওরে ‘পাবলিক সারভেন্ট’দেরে আয় দেখে যাবি তোরা!

 ​​ ​​ ​​ ​​ ​​​​ কালের চরকা ঘোর,

দেড়শত কোটি মানুষের ঘাড়ে – চড়ে দেড়শত চোর।

এ আশা মোদের দুরাশাও নয়,​​ সেদিন সুদূরও নয় –

সমবেত রাজ-কণ্ঠে যেদিন শুনিব প্রজার জয়!

রাজা-প্রজা কবিতা । সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi nazrul islam ]

 

রাজা-প্রজা কবিতা । সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থ । কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম [ Kazi nazrul islam ]
সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থের অন্যান্য কবিতাঃ

Leave a Comment