প্রভাতি কবিতাটি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ঝিঙেফুল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে। ঝিঙেফুল বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যগ্রন্থ । বইটি বাংলা আশ্বিন মাসে ১৩৩৩ সালে প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ছিল ডিএম লাইব্রেরি, ৬১ নম্বর কর্ণওয়ালিশ স্ট্রিট, কলিকাতা। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছিল- বীর বাদলকে ।

প্রভাতি কবিতা
ভোর হলো দোর খোলো খুকুমণি ওঠ রে! ঐ ডাকে জুঁই-শাখে ফুল-খুকি ছোটরে! খুকুমণি ওঠো রে! রবি মামা দেয় হামা গায়ে রাঙা জামা ওই, দারোয়ান গায় গান শোন ঐ, রামা হৈ!’ ত্যাজি নীড় করে ভিড় ওড়ে পাখি আকাশে, এন্তার গান তার ভাসে ভোর বাতাসে।
চুলবুল বুলবুল শিস্ দেয় পুষ্পে, এইবার এইবার খুকুমণি উঠবে! খুলি হাল তুলি পাল ঐ তরী চললো, এইবার এইবার খুকু চোখ খুললো। আলসে নয় সে ওঠে রোজ সকালে রোজ তাই চাঁদা ভাই টিপ দেয় কপালে। উঠলো ছুটলো ওই খোকা খুকি সব, ”উঠেছে আগে কে” ঐ শোনো কলরব। নাই রাত মুখ হাত ধোও, খুকু জাগো রে! জয়গানে ভগবানে তুষি বর মাগো রে।

কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সঙ্গীতকার। তার মাত্র ২৩ বৎসরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের জন্ম দেন। এই দুটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ও ভাঙ্গার গান সঙ্গীত। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একই সময় রচিত আরেকটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে কামাল পাশা- এতে ভারতীয় মুসলিমদের খিলাফত আন্দোলনের অসারতা সম্বন্ধে নজরুলে দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন আন্তর্জাতিক ইতিহাস-চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।

১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কবিতা-সংকলন অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতায় একটি নতুনত্ব সৃষ্টিতে সমর্থ হয়, এর মাধ্যমেই বাংলা কাব্যের জগতে পালাবদল ঘটে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরপর এর কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: “প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, শাত-ইল্-আরব, বিদ্রোহী, কামাল পাশা” ইত্যাদি। এগুলো বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তার শিশুতোষ কবিতা বাংলা কবিতায় এনেছে নান্দনিকতা খুকী ও কাঠবিড়ালি, লিচু-চোর, খাঁদু-দাদু ইত্যাদি তারই প্রমাণ।