Site icon Amar Nazrul [ আমার নজরুল ] GOLN

নজরুলের গানে ঋতু বৈচিত্র্য । নজরুলের ভাবনা

নজরুলের গানে ঋতু বৈচিত্র্য । নজরুলের ভাবনা

নজরুলের গানে ঋতু বৈচিত্র্য : নজরুলসঙ্গীতের বিষয় বৈচিত্র্যের অভাব নেই। স্বদেশী চেতনা, লোকসঙ্গীত, কাব্যগীতি, হাসির গান, ভক্তিগীতি, গজল, কীর্তন, হামদ, নাত, হোরী, পাহাড়ী, টপ্পা, ঠুংরী, কাওয়ালী, রাগভিত্তিক গান ইত্যাদি সব কিছুই নজরুলের গানের সম্ভারে স্থান পেয়েছে। সুতরাং বাংলার প্রকৃতি তথা ঋতু বৈচিত্র্যও যে তাঁর কবি মানসকে আকৃষ্ট করে তাঁর গানের অন্যতম উপজীব্য হয়নি, একথা বলার অবকাশ নেই।

 

 

নজরুলের গানে ঋতু বৈচিত্র্য । নজরুলের ভাবনা

 

নজরুলসঙ্গীতে ষড় ঋতুর প্রভাব যে সুস্পষ্ট সে সম্বন্ধে আমরা আলোচনা করলেই বুঝতে পারবো।

গ্রীষ্ম :

গ্রীষ্মের দুঃসহ তাপ, বৈশাখী ঝড়, রুক্ষ্ম ধুসরত ইত্যাদি সব কিছুরইপ্রভাব পড়েছে নজরুলের গ্রীষ্মর গানে। যেমন-বৈশাখী ঝড়ের বর্ণনায় ।

“এল এলরে বৈশাখী ঝড়
ঐ বৈশাখী ঝড় এল এল
মহীয়ান সুন্দর ।
খর বৈশাখের একটি চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন-
“মেঘবিহীন খর বৈশাখে তৃষ্ণায় কাতর চাতকী ডাকে”
গ্রীষ্মের শুষ্ক কঠোর রূপ তিনি গানের কথার মাধ্যমে বলেছেন এভাবে-
“তৃষিত আকাশ কাঁপে রে
প্রখর তাপে রে”

বর্ষা :

পদাবলীর যুগ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বাংলার ঋতু সঙ্গীতে বর্ষা ঋতুর প্রাধান্যই বেশি। নজরুলের ঋতু সঙ্গীতের মধ্যে বর্ষা ঋতুর গানের আধিক্য সর্বাপেক্ষা বেশি। আষাঢ় শ্রাবণের ভরা বাদরের নানা রূপ, বাদল মেঘের গুরু গর্জন, শ্রাবণের অবিরল ধারা, বর্ষনস্নিগ্ধ প্রকৃতির রূপ ইত্যাদি বর্ষার বহু বিচিত্র্যরূপ কবি উল্লেখ করেছন। তার অজস্র বর্ষা ঋতুর গানের মধ্যে এখানে মাত্র কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-

“অঝোর ধারায় বর্ষা ঝড়ে”
বর্ষা ঋতুর আগমনে কবি গেয়েছেন-
“বর্ষা ঋতু এল এল বিজয়ীর সাজে।”
“বরষা ঐ এল বরষা।”

 

 

বর্ষার ভাদর দিনেই তো প্রিয় বিরহের বেদনা হৃদয়কে আপ্লুত করে-

“শাওন আসিল ফিরে সে ফিরে এলো না।”

মেঘ মেদুর বরষায় কোথা তুমি”
“শাওন রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে”
বর্ষনমুখর দিনের কত সুন্দর আলেখ্যই না কবি একেছেন-
“আজ শ্রাবণের লঘু মেঘের সাথে”
“রিম ঝিম রিম ঝিম ঝিম ঘন দেয়া বরষে”
বর্ষা ঋতুর আরও কয়েকটি আনিন্দ্যসুন্দর আলেখ্য-

শরৎ :

বর্ষা বিদায় নেয়। আবার মেগের কোলে ছড়িয়ে পড়ে রোদের হাসি। ধানের ক্ষেতে চলে রৌদ্র ছায়ার লুকোচুরি। বনে বনে শোভা পায় কাশের গুচ্ছ আর শেফালীর সমারোহ । শরতের এই মন মাতানো রূপ কবির দৃষ্টি এড়ায়নি। তিনি শরৎকে মুক্তকণ্ঠে আহ্বান জানিয়েছেন-

‘এসে শারদ প্রাতের পথিক
এস শিউলি-বিছানো পথে”
“শিউলি ফুলের মালা দোলে”
“শিউলি তলায় ভোর বেলায়”

 

 

হেমন্ত :

হেমন্ত ঋতু কবি মনকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করতে পারে নি। তাই এই ঋতুর গান নজরুলসঙ্গীতে এক রকম বিরল বললেই চলে। তবে এই বিশেষ ঋতুটিকে কবি আহ্বান করতে ভোলেনি।

‘হেমন্তিকা এস এস হিমেল শীতল বন বলে ।

শুভ্র পূজারীনি বেশে কুন্দ-কবরী মালা গলে।।”

শীত :

ঋতুভিত্তিক পর্যায়ের নানা গানের ভিড়ে শীতের অনুভটিকেও নজরুল তাঁর গানে সংযুক্ত করেছেন। পরিসর খুব ছোট হলেও কয়েকটি গানে শীত ঋতুকে কবি সুর নন্দিত বাণীতে আবদ্ধ করেছেন। যেমন-

“ভাঙা মন জোড়া নাই যায়।”

 

 

বসন্ত :

শীতের শেষে মধুর বসন্ত হয়ে ওঠে মুখরিত। খুলে যায় দক্ষিণা দুয়ার। আসে বসন্ত ফুলবনে ।

লাগে দোল, ফাগুনের দোল ।
“বসন্ত এল এল এল রে”
“আসে বসন্ত ফুল বনে” এল ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত”
বসন্ত বিদায়ের সময় গেয়েছেন কবি-
“ফাগুন ফুরাবে যবে-
কোয়েলা নীরব হবে।”

পরিশেষে বলা যায়, নজরুল তার গানে ঋতুকে এত সুন্দর করে উপস্থান করেছেন যে ঋতুর একটি সুন্দর চিত্রকে আমরা তার গানের মাধ্যমে সহজে অনুধাবন করতে পারি ।

আরও দেখুনঃ

Exit mobile version